মাধ্যমিকে পাসের আনন্দে আত্মহারা শিক্ষার্থীদের কপালে এখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ। একাদশ শ্রেণীতে কোথায় ভর্তি হওয়া যাবে? কোন কলেজ পাওয়া যাবে? ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি ইচ্ছুক জিপিএ-৫ পাওয়া ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জনের মধ্যে দুশ্চিন্তা বেশি। কারণ সারা দেশে মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান (কলেজ) যে কয়টি রয়েছে, তাতে আসন সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত।
বেসরকারি পরিসংখ্যান মতে ৫০-৬০ হাজারের মতো আসন রয়েছে রাজধানীকেন্দ্রিক ও তার আশপাশের মানসম্পন্ন অর্ধশতাধিক কলেজে। মেধাবীদের সবারই প্রত্যাশা রাজধানীর ভালো যেকোনো কলেজে ভর্তির। কিন্তু সে ‘আশায় গুড়ে বালি’ হবে মেধাবীদের। ফলে তাদের নিম্নমানের কলেজেই এখন ভরসা। সরকারি পরিসংখ্যান মতে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি কলেজ মিলে আসন রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ। এসব কলেজ দেশের নানা অংশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
মানসম্পন্ন কলেজে মেধাবীদের ভর্তি নিয়ে শঙ্কা সম্পর্কে জানতে চাইলে আন্তঃবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, সবাইকে তো আর দেশের সেরা কলেজে ভর্তি করা যাবে না। মেধাবীদের র্যাংকিং করা হবে। জিপিএ ৫ ধারী সবাই তো একই নাম্বার পায়নি। এ জন্যই র্যাংকিং করা হচ্ছে। সে অনুসারেই ভর্তি ইচ্ছুক মেধাবীদের পছন্দ নির্ধারণ করতে হবে। সে অনুসারেই তাকে আবেদন করতে হবে।
একাদশ শ্রেণীতে অনলাইন এবং এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তিকার্যক্রম শুরু হবে আগামী ১২ মে এবং চলবে ২৩ মে পর্যন্ত। ভর্তি কার্যক্রম ২৭ জুন থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে ৩০ জুনের মধ্যে। এ ছাড়া ২০১৯-২০ শিক্ষবর্ষে একাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরু হবে ১ জুলাই’১৯ থেকে বেড়েছে।
এমনিতেই এবার এসএসসি ও সমমানের ফলাফলে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির হার যেমন কমেছে তেমনি বেড়েছে পাসের হার। ফলে জিপিএ ৪ শিক্ষার্থীরা ভালো কলেজে ভর্তির জন্য আবেদনই করতে পারবে না। এতেই হতাশা ও ক্ষোভ বেড়েছে তাদের মধ্যেও। অভিভাবকরা বলেছেন, এবারের ফলাফলে এমনিতেই কিছুটা ছন্দ পতন ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা জীবনের শুরুতেই হোঁচট খাবে। শিক্ষা জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ ৫ এর চেয়ে কম কিন্তু জিপিএ ৪ কিংবা তার চেয়ে বেশি পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখ ১৫ হাজার ৮১৮ জন। সব জিপিএ ৫ ধারীর প্রথম পছন্দ হচ্ছে ছেলেদের জন্য নটরডেম কলেজ, সিটি কলেজ ও রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ। সরকারি কলেজগুলোর মধ্যে ঢাকা কলেজ পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।
মেয়েদের প্রথম পছন্দ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং হলিক্রস কলেজ। এ ছাড়া জেলা শহরে অবস্থিত সরকারি কলেজগুলোই প্রথম পছন্দ থাকবে। এই হিসেবে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েও অন্তত ৫৫ হাজার শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। ফল হাতে পাওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ভর্তি নিয়ে উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন।
নীতিমালা অনুযায়ী, অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম যেকোনো শিক্ষার্থী সর্বনিম্ন ৫টি থেকে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে আবেদন করতে পারবে। অনলাইনে মোট আবেদন (৫ থেকে ১০ কলেজ) ফি ১৫০ টাকা। এসএমএসের মাধ্যমেও আবেদন করা যাবে। তবে সে ক্ষেত্রে প্রতি কলেজে আবেদনের জন্য ১২০ টাকা ব্যয় করতে হবে। তবে অনলাইন (www.xiclassadmission.gov.bd) এবং এসএমএস মিলিয়ে কোনোভাবেই ১০টির বেশি কলেজে ভর্তির আবেদন করা যাবে না। ভর্তির আবেদনে এবার কিছুটা নতুনত্ব আনা হচ্ছে। যা ভর্তি আবেদনের সময়ই জানিয়ে দেয়া হবে বলে আন্তঃবোর্ড সমন্বয় কমিটি সূত্রে বলা হয়েছে।