ঢাকায় নিরাপদ পানির দাবিতে অনুষ্ঠিত এক গণশুনানিতে মঙ্গলবার পানি সরবরাহকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করেছেন আয়োজক ও সেখানে আসা অংশগ্রহণকারীরা। পাশাপাশি সেখানে আরও বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেছেন তারা।
যেমন, পানির দূষণের জন্য কারো অসুখ হলে ক্ষতিপূরণ, যখন থেকে দূষিত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তারপর দেয়া সকল বিলের অর্থ ফেরত, এমন সব দাবি করা হয়েছে গণশুনানি থেকে।
ঢাকার প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এই গণশুনানিতে গিয়ে দেখা গেলো ঢাকার কয়েকটি এলাকার পানি বোতলে ভরে টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেসব পানির রঙ হালকা হলুদ, কোনটি দেখে মনে হচ্ছে কাঁদা মেশানো ঘোলাটে আর দুএকটি বোতলের পানির রঙ রীতিমতো ভীতিকর।
সেখানে বাবার সাথে এসেছেন কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী প্রাপ্যতা হাসিনা। তিনি বলছেন, “হয়ত সকাল বেলা উঠেছি, মুখ হাত ধুতে হবে। এমন সময় পানিটা একেবারে লাল বা পানিতে নানা ধরণের ময়লা দেখা যাচ্ছে। এঁটো মুখে তো আর কোথাও যাওয়া যায় না।”
ঢাকার জুরাইনের এই বাসিন্দা বলছেন, এই পানি তারা খাওয়ার জন্য ব্যবহার করেন না। খাওয়ার জন্য তারা কাছের একটি এলাকার মসজিদের ডিপ টিউবওয়েলের পানি কিনে আনেন।
ঢাকায় সরবরাহ করা পানির অভাব বা এর মান নিয়ে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের নানা রকমের অভিযোগ নতুন কিছু নয়।
পল্লবীর বাসিন্দা পারভিন বেগম প্রেসক্লাবের আশপাশে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীজীবী। তিনি বলছেন, পানি ফুটিয়ে খেতে গিয়ে ব্যাপক ঝক্কি পোহাতে হয় তাকে।
তিনি আরো বলেন,‘বড় বড় পাতিলের দুই পাতিল পানি ফুটাই প্রতিদিন। সকালে একটা ফুটিয়ে রেখে এসেছি। আবার বিকেলে গিয়ে এক পাতিল ফোটাবো।’
তার কাছে মনে হয় এই কাজটি ব্যাপক সময় নষ্ট করে।
নিজের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলছিলেন, “পানি আনতে হয়, তা হাড়িতে ভরতে হয়, চুলায় দিতে হয়, সেটা আবার ঘরে নিতে হয়, ছাঁকতে হয়, বোতলে ভরতে হয়, তা ফ্রিজে রাখতে হয়। কত কাজ। পানিটা যদি পরিষ্কার হতো তাহলে এগুলো করা লাগতো না। এতে কত সময় নষ্ট হয়।”
সম্প্রতি ঢাকায় সরবরাহ করা পানি সম্পর্কিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান টিআইবি। যাতে বলা হয়েছে, ঢাকায় পানির মান খারাপ হওয়ায় ৯১% মানুষ পানি ফুটিয়ে খান। আর তাতে গ্যাস খরচ হয় আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার।
গণশুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের একজন চিকিৎসক লেনিন চৌধুরী। তিনি বলছেন, “একজন চিকিৎসক হিসেবে আসার প্রধান কথা হচ্ছে ঢাকায় যে সংক্রামক ব্যাধি যার প্রধান কারণ ওয়াসার দূষিত পানি। এটি মানুষকে একদিকে যেমন রোগাক্রান্ত করছে, তেমনি আমাদের স্বাস্থ্য বাজেটের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।”
তিনি দাবি করছেন, “নাগরিক হিসেবে, ট্যাক্স পেয়ার হিসেবে আমরা যাদের নিয়োগ দিয়েছি, ট্যাক্সের টাকায় যাদের বেতন ভাতা হয়, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। হয় তারা দায়িত্ব পালন করবে নাহলে তারা সরে যাবে।”
গণশুনানির উদ্যোক্তা ঢাকার জুরাইনের একজন বাসিন্দা মিজানুর রহমান। কিছুদিন আগে বোতলে করে পানি নিয়ে সোজা ওয়াসা প্রধানের কার্যালয়ে গিয়ে বেশ সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। নিজ এলাকার পানি দিয়ে শরবত খাওয়াতে চেয়েছিলেন কর্মকর্তাদের। কিন্তু কেন এই গণশুনানি?
মি. রহমান তার ব্যাখ্যা করে বলছিলেন, “যেভাবে কাজ হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না সেটা মানুষের মাথায় দেয়ায় আমার কাজ। সংকট সমাধানে আমাকে দায়িত্ব নিতে সেজন্য তাকে জাগ্রত করা। জোরালোভাবে আমরা সংকটের সমাধান চাই এবং আমরা বিশ্বাস করি তার সমাধান আছে। কিন্তু তারা (ওয়াসা) সেদিকে মনোযোগী না। অথবা মানুষের প্রতি তাদের ভালোবাসা বা দায়িত্ববোধ নেই।”
কিন্তু ওয়াসার দাবি ঢাকায় সরবরাহ করা পানি ‘শতভাগ সুপেয়।’ এপ্রিলের শেষে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর তেমনটাই দাবি করেছেন ওয়াসার এমডি।
এদিকে গণশুনানিতে যেসব দাবি উঠেছে সেনিয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে ওয়াসার কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সূত্র : বিবিসি বাংলা।