যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক উচ্চশিক্ষা নিয়ে গবেষণা করে এমন একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা এশিয়াতে উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা করেছে। তার মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই।
টাইমস হাইয়ার এডুকেশন নামে লন্ডনভিত্তিক এই প্রকাশনাটি ২০১৯ সালের যে তালিকা দিয়েছে সেখানে এশিয়ার ৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩৫০টি। কিন্তু বাংলাদেশের অনুমোদিত ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটিও স্থান পায়নি এই তালিকায়।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাপদ্ধতিসহ নানা বিষয় নিয়েই বিভিন্ন সময় সমালোচনা হয়। কিন্তু কেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় স্থান পেল না?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপদ্ধতি এখনো সনাতন পদ্ধতির মধ্যেই রয়েছে, সাথে রয়েছে নানা অরাজকতা। আমাদের একটা বড় ঘাটতির জায়গা হলো যে টিচিং অ্যান্ড লার্নিং। এই দু’টি পদ্ধতি খুব পুরনো আমলের রয়ে গেছে। লার্নিং কত ধরনের আছে সেটা নিয়ে গবেষণার অভাব আছে, বোঝাবুঝির অভাব আছে। এখানে তো অনেক দিন ধরে অনেক অরাজকতা চলছে সেসব মিটিগেট করার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেটাই বড় সমস্যা।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফারজানা সিদ্দিকা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরও গুটিকয়েক বিভাগে গবেষণা হয়। বিশ্ব র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণা বড় ভূমিকা পালন করে, যা হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে ছাত্রদের পাস করিয়ে দেবে এই উদ্দেশ্য যত না তার চেয়ে বেশি থাকবে গবেষণার কাজ। বাংলাদেশে যা হচ্ছে, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কিছু গবেষণার কাজ হচ্ছে। কিন্তু এর বাইরে কোনো গবেষণা হচ্ছে না। গবেষণার জায়গায় বাংলাদেশের অবস্থান অনেক পেছানো।
এ দিকে এক সময়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বরাবর এসেছে দেশের নানা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। কিন্তু এসব যে উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নাম লেখানোর জন্য কোনো কাজ করে না সেটাই বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, পরিচালনা নিয়োগ থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে রাজনীতি মূল নিয়ামক হয়ে ওঠার কারণে পড়ালেখা, গবেষণা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ বের করা একেবারেই একটা জটের সৃষ্টি করেছে। এখানে শিক্ষা ছাড়া সব কিছুকেই মূল্য দেয়া হয়।
এ দিকে ১৩টি দিক বিবেচনা করে তারা এই তালিকা করেছে। গতবারের প্রথম স্থানে থাকা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরকে টপকে এবার প্রথম স্থানে এসেছে চীনের সিংহুয়া ইউনিভার্সিটি। ৩ এবং ৪ নম্বরে রয়েছে হংকং এর দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়।
এভাবে ৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে তালিকার মধ্যে, কোনটি তালিকার ওপরের দিকে এসেছে কোনটি নেমেছে কিছুটা নিচের দিকে। আবার নতুন যোগ হয়েছে কয়েকটি ইউনিভার্সিটি। বিবিসি।