ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশ এসে নিঃশেষ হয়ে যায়। এটি আঘাত হানলেও তেমন ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি দেশকে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ‘ফণী’ আঘাত হানার অনেক আগে পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব হয়েছে। এতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কম হয়েছে।
তবে আবহাওয়া অধিদফতর ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সার্বিক দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মালিকানাধীন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ একটি ‘কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট’। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে জাপানের একটি স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয়।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ গতকাল শনিবার (৪ মে) ঘূর্ণিঝড় ফণী নিয়ে দলীয় মনিটরিং সেলের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দেশবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। গত ১০ বছরে তার শাসনামলে সবদিক দিয়ে দেশের উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে উন্নয়নের একটি বড় অংশ হচ্ছে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ।’
‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের খবর আমাদের দেশের আবহাওয়া অধিদফতর সংগ্রহ করেছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য আগাম তথ্য পেয়েছিলাম বলে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এজন্য সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।’
অপরদিকে রোববার (৫ মে) সচিবালয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি আরও বেশি তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, তিনি যে পদক্ষেপটা নিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট; এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অনেক আগেই ফণীর পূর্বাভাসটা পেয়েছিলাম। যেটা প্রায় সপ্তাহখানেকের বেশি আগে আমরা পেয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন হয়েছে বলেই আমরা এত দ্রুত এত আগাম সংবাদ পাওয়ায় প্রস্তুতিটাও সম্পূর্ণভাবে নিতে পেরেছি।’
‘১৯৯১ সালে পূর্বাভাস না পাওয়ায় ভয়াবহ বিপর্যয় হয়েছিল। সেখানে দেড় লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল’- যোগ করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দূরদর্শী নেত্রী যে বলি, এই দূরদর্শী সিদ্ধান্তের জন্যই তিনি বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটা অর্থনীতির দেশকে নিয়ে সাহস দেখিয়েছেন যে, আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকা দরকার। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। ভবিষ্যতে হয়ত আরও বেশি উপকার পাব, এটা বিশেষ ক্ষেত্রে আমাদের কাজে লাগবে।’
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মো. শামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সব ধরনের যোগাযোগ সুবিধা আবহাওয়া অধিদফতর পেয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার, ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমরা ব্যবহার করে থাকি।’
পূর্বাভাস দেয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া অধিদফতরের একাধিক আবহাওয়াবিদ নাম প্রকাশ না করে জানান, পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে মেঘ দেখাসহ অন্যান্য কাজের জন্য বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জাপানের হিমাওয়ারি স্যাটেলাইট ব্যবহার করে।
তারা আরও জানান, পূর্বাভাসের বিষয়টা একটা আলাদা প্রক্রিয়া। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, বৈশিষ্ট্যগতভাবেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট হিসেবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।
কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হচ্ছে কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। এটার মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ করে থাকি। পূর্বাভাসটা আমাদের মাধ্যমে প্রচারিত হয়।’
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সরাসরি আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে না বলেও জানান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাবেক চেয়ারম্যান শাজাহান মাহমুদ।