ফুটফুটে কন্যা সন্তানের মা হলেন সেই ধর্ষিতা নারী

নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বাড়ি ঘর হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন আঙ্গুরী। পরিবারের সবাই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। কিন্তু সেখানে এসেও যেন দুর্ভোগের শেষ হয়নি তাদের। আওয়ামী লীগ নেতার প্রবাসী সন্তানের হাতে ধর্ষিত হতে হয় তার মেয়েকে। বিচার হয়নি সেই ঘটনার। আর ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া সেই নারী এবার ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার দোহার উপজেলায়। ভূক্তভোগী ধর্ষিতা নারী একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।

ঢাকার দোহার উপজেলার নয়াবাড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম ধোয়াইর গ্রামে ধর্ষণের শিকার হওয়া বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সেই নারীর নাম সম্পা (২০)। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রসব বেদনা নিয়ে দোহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসার পথে দোহার থানার নিকট সড়কে ইজিবাইকের মধ্যেই কন্যা সন্তান প্রসব করেন তিনি।

পরে সেখান থেকে সাংবাদিক ফারুক আহমেদ ও সাংবাদিক আতাউর রহমান সানী মা ও নবজাতক মেয়েকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। চিকিৎসক বলছেন, মা ও মেয়ে ভাল আছেন। তবে প্রতিবন্ধী মা কিছুটা রক্ত শুন্যতায় ভুগছেন।

জানা যায়, নদী ভাঙ্গনের কবলে বাড়ি ঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয় আঙ্গুরীর পরিবার। পরে পশ্চিম ধোয়াইর গ্রামে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেন প্রভাবশালী ছাত্তার পত্তনদার। কোনো রকম টিন বাঁশের ঝাপড়া ঘরে ৪ সদস্যের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী পরিবারের বসবাস। স্বামীও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় বাড়ি ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছে কয়েকবছর আগে।

পরিবারের ভরণপোষণ করতে বাড়ি বাড়ি গৃহকর্মীর কাজ করেন প্রতিবন্ধীর মা আঙ্গুরী বেগম। এরই মধ্যে নয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাত্তার পত্তনদারের লম্পট পুত্র আল-আমিন ছুটিতে আসেন দুবাই থেকে। পুকুরে মাছ ধরার ছলে ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ার সুযোগ নিয়ে জোর করে সম্পাকে ধর্ষণ করে সে। এই ঘটনার পর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সম্পা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
এ সুযোগে ধর্ষক আল-আমিন আবারো দুবাই পাড়ি জমায়। লম্পট আল-আমিনের পিতা সাত্তার পত্তনদারের কাছে এ বিষয়ে বিচার চাইলে তিনি ভূক্তভোগী সম্পাসহ তার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন।

এদিকে সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় চেয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয়দের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কোথাও বিচার না পেয়ে প্রতিবন্ধীর মা বাদী হয়ে গত ১০ এপ্রিল দোহার থানায় ধর্ষক আল আমিনকে প্রধান আসামি ও তার পিতা সাত্তারসহ মোট ৪ জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সম্পার মা আঙ্গুরী বলেন, আমার মেয়ে এমনিতেই প্রতিবন্ধী তার মধ্যে শিশুর মা হলো। এখন এ শিশুর দায়িত্ব নেবে কে? আর শিশুর পিতৃ পরিচয় কী? আমি এই মেয়েকে নিয়ে এখন কী করব। আমি মামলা করার পরও মূল আসামি আল আমিন ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তারা আমার মেয়েকে হত্যার হুমকিও দিচ্ছে। আমি কি এর কোনো বিচার পাব না? নাকি আমি গরীব বলে বিচার পাওয়ার অধিকার নাই।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীর সন্তান প্রসবের খবরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন শিশুটিকে দেখতে যান। একইসঙ্গে শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন একটি নিঃসন্তান দম্পতি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শামীম আহম্মেদ হান্নান জানান, সামাজিক অবক্ষয়ের ফলে সমাজে এমন ঘটনা ঘটছে। সত্যিই একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি বা আমরা লজ্জিত।

এ বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা রিবা বলেন, সভ্য সমাজে এখনো অসভ্য মানুষ রয়েছে। তাই তো সমাজে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীরাও ধর্ষণের শিকার হয়। প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হবে।

দোহার থানার ওসি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বাচ্চা প্রসবের বিষয়টি আমি শুনেছি। মামলার প্রধান আসামি প্রবাসে থাকায় আসামিরা তাদের দোষ অস্বীকার করছে। মামলাটি একটু জটিল। প্রতিবন্ধী মেয়েটি এখন সন্তান জন্ম দিয়েছে, ডিএনএ টেস্ট করা হলে মেয়েটির বিচার পাওয়া সহজ হবে। প্রধান আসামি আল আমিনকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top