সেই সিরাজ এখন শ্লোগান মাস্টার

গুলি খাওয়ার পর মনে হচ্ছিল তিনি মারাই যাবেন। না তিনি মারা যাননি। তবে ওই সিরাজ এখন শ্লোগান মাস্টার। ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তখনই পুলিশের হামলার শিকার হন বাংলাদেশ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। অভিযোগ রয়েছে, ওই দিন পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে পুলিশ তার পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। এতে সিরাজের নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। পরে এক পথচারী মহিলার সহায়তায় হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহযোগিতা এবং তত্ত্বাবোধনে চিকিৎসা চলে। তিন দিন লাইফ সাপোর্ট ও পাঁচ দিন আইসিইউতে ছিলেন। শরীরে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন করে শরীরের কিছু অংশ কেটে ফেলতে হয়। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা কাটিয়ে আবার রাজপথে ফিরে আসেন সিরাজ।

মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা সিরাজ এখনো সেই দুর্বিষহ স্মৃতি বুকে নিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের নামে শ্লোগান দিয়ে রাজপথ মুখরিত করে সিরাজ। রাজপথে সরব থাকেন নব-উদ্যমে।

গুলিবিদ্ধ সিরাজ দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানান, ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই সকাল ১১ টার দিকে তারেক রহমানের নামে কুটক্তি করার বিরুদ্ধে আমরা মিছিল নিয়ে বের হলে বিনা উস্কানিতে পুলিশ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। আমি প্রথম গুলি খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলে দ্বিতীয় দফায় পুলিশ কাছে এসে আমার পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আবার রাজপথে ফিরে আসতে পেরে মহান আল্লাহ তায়লার কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক ভাইয়ার সহযোগিতাসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, বড় ছোট বিভিন্ন পর্যায়ের ভাই- বন্ধু, বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ঐকান্তিক চেষ্টা ও ভালোবাসায় মহান রব্বুল আল-আমিন হয়ত নতুন জীবন দিয়েছেন। যারা সেদিনগুলোতে পাশে ছিলেন তাদের প্রতি শুধু কৃতজ্ঞতা নয় হৃদয় থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থাকে সব সময়। তাদের সেই দিনগুলোতে সহযোগিতা, সাহস, অনুপ্রেরণা আমাকে সুস্থ হতে সহযোগিতা করেছে।

এই ছাত্র নেতা আরো বলেন, জীবনে শেষদিন পর্যন্ত শহীদ জিয়ার নামে শ্লোগান দিতে চাই। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলে দলের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে পারলে স্বার্থক মনে করবো।

পারিবারিকভাবে বিএনপি পরিবারের সন্তান সিরাজের পিতা পেশায় শিক্ষক। তিনি পিরোজপুর সদর উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। সিরাজের শ্লোগান দেয়াকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে তৃণমূল ছাত্রদলের কাছে শ্লোগান মাস্টার হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছেন সিরাজ।

সিরাজের জন্মস্থান নিজ জেলা পিরোজপুরের জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, সিরাজ পিরোজপুর জেলার এক আদর্শ গর্বিত জাতীয়তাবাদী সন্তানের নাম। তার ত্যাগ, রক্ত দল ও আমরা ভুলতে পারি না, সাবেক ছাত্রনেতা হিসাবে ভালো লাগে যখন দেখি আমাদের আদর্শের সু-সন্তান সিরাজরা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে শহীদ জিয়া, দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের নামে জীবন বিলিয়ে দিতে কার্পণ্য করে না। এই সিরাজরাই আগামীদিনের অনুপ্রেরণা। এদের ভালোবাসায় এই শহীদ জিয়া পরিবার ও বিএনপি বেঁচে থাকবে অনন্ত কাল।

সিরাজের মা নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘‘আমার বুকের ধন সিরাজেরে যেভাবে গুলি করছিল। সবাই ভাবছে ও বাঁচবে না। আল্লাহর কাছে যে কত কাঁদছি, সেটা একমাত্র আল্লাহ জানে। আল্লাহ আমার মানিকরে ফিরাইয়া দিছে। ’’ তিনি বলেন, সিরাজ ছোটকাল থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। আমার মানিক দেশের জন্য গুলি খাইছে, দেশমাতা খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের জন্য গুলি খাইছে। আমি আমার সিরাজকে দেশের জন্য উৎসর্গ করে দেশমাতা খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দিছি।’

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top