একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়ের পর শুরু থেকেই বিএনপির বিজয়ী এমপিদের শপথ না নেয়ার ব্যাপারে অনড় ছিল দলটি। আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বারবার শপথ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানানোর পরও কোনো সাড়া না পেয়ে অনেকটা অস্বস্তির মধ্যে ছিল ক্ষমতাসীনেরা। কিন্তু গতকাল বিএনপির চার এমপিসহ পাঁচজন এমপি শেষমেশ নির্দিষ্ট সময়ের একদিন আগেই শপথ গ্রহণ করায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত এমপিদের শপথ গ্রহণের জন্য শুরু থেকেই সরকারি দল বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে তৎপরতা চালিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপির ছয় এমপির মধ্যে গতকালই চারজন শপথ গ্রহণ করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার শপথ নিয়েছিলেন একজন। যদিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখনো শপথ গ্রহণ করেননি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আটজন এমপি জয়লাভ করেন। এর আগেই গণফোরামের দুই নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির হোসেন দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এমপি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, বিএনপির এমপিরা শপথ গ্রহণ করে তারাই বেশি লাভবান হয়েছে। গত নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে হেরে গিয়ে বিএনপি অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। রাজনীতির মাঠেও তারা কোনো আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে পারেনি। বিশেষ করে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে গেলেও বিএনপি কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। তাদের কোনো কর্মসূচিতে সাধারণ জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা চোখে পড়েনি। নেতাকর্মীরা ঢিলেঢালাভাবে গা ছাড়া অবস্থায় আয়েশে কাটিয়েছে। এতেই বোঝা যায়, বিএনপি জনগণ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে সংসদে না গিয়ে তাদের বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। এর মাধ্যমে সংসদে গিয়ে অন্তত বিএনপির এমপিরা তাদের নেত্রীর মুক্তির বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারবেন।
রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএনপির এমপিরা শপথ গ্রহণ করায় বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগই বেশি লাভবান হয়েছে। প্রথমত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে। অল্পসংখ্যক এমপি হলেও বিএনপি শপথ না নেয়ায় সংসদ ছিল নিষ্প্রাণ। এখন প্রাণবন্ত হবে। দ্বিতীয়ত, শুরু থেকেই বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিতর্কিত বলে অভিযোগ করে আসছে। যার ফলে সংসদে না যাওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিছুটা হলেও চাপের মুখে ছিল আওয়ামী লীগ। এখন সেই চাপ আর থাকছে না। আওয়ামী লীগ এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভালোভাবে বোঝাতে সক্ষম হবে যে, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অভিযোগ ছিল ভিত্তিহীন। তৃতীয়ত, বিএনপি যদি সংসদেই যাবে তাহলে উপজেলা নির্বাচন, সিটি নির্বাচন বয়কট করল কেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তৃণমূল চাঙা থাকত। কিছু পদে জয়ী হলে তারাও বিএনপির আগামীর আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে পারত।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত সবাইকে না হলেও অন্তত কয়েকজনকে সংসদে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার ও দলের পক্ষ ইতিবাচক ভূমিকা ছিল। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মোকাব্বির হোসেন এবং সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বিএনপির জাহিদুর রহমান এমপি হিসেবে শপথ নেন। এতেই আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বাকি এমপিদের শপথ নেয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেন। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির একজন এমপি শপথ নিয়েছেন। আমরা আশাবাদী বাকিরাও শপথ নেবেন। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না, তিনি শপথ নেবেন কি নেবেন না।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিক ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপির এমপিরা শপথ নিয়েছেন- এটা ইতিবাচক দিক। বিএনপির পাঁচজন এমপি ইতোমধ্যে শপথ নিয়েছেন। আশা করছি, গণতন্ত্রের স্বার্থে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবও শপথ নেবেন। তবে এটা তার জন্য অনেক কঠিন। সময় আছে আর একদিন। জানি না উনি ব্যক্তিগতভাবে কী সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, বিএনপি বুঝে গেছে তাদের আন্দোলনের সাথে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সংসদে যাওয়া ছাড়া তাদের কোনো বিকল্পও নেই। বিএনপির এমপিদের শপথ গ্রহণ এটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। বিএনপি এখন সংসদে গিয়ে তাদের দাবি-দাওয়াগুলো তুলে ধরতে পারবে।