রংপুরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা, অধ্যক্ষ লাঞ্ছিত

রংপুরের কাউনিয়ার হারাগাছ সরকারী কলেজে সরকারি নিয়মে ভর্তি, বেতন ও পরীক্ষা ফি নেয়ার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সোমবার হামলা চালিয়েছে কলেজ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় ১০ শিক্ষার্থী আহত এবং কলেজ অধ্যক্ষ লাঞ্ছিত হয়েছেন। তিন শিক্ষার্থী হামলা থেকে রক্ষা পেতে অধ্যক্ষের রুমে আশ্রয় নিলে পুলিশ তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, হারাগাছ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ কলেজটি সরকারি হওয়ার পরেও বেসরকারী নিয়মে ভর্তি বেতন ও পরীক্ষার ফিসহ অন্যান্য ফি নিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারি নিয়মে ভর্তি, বেতন, পরীক্ষা ফি নেয়ার দাবি জানায়। সোমবার সকাল থেকেই দাবি আদায়ে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শেষে শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশ করছিল শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১ টায় অধ্যক্ষ আব্দুস ছাত্তার শিক্ষার্থীদের কাছে এসে দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার ঘোষণ দিলে শিক্ষার্থীরা সমাবেশ শেষ করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সমাবেশ সমাপ্ত ঘোষণা করে দাবি দাওয়া মেনে নেয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা একে অপরের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করতে থাকলে হঠাৎ করে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন , সিনিয়র সহসভাপতি শারাফাত হোসেন সোহাগ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মাহমুদ আকাশ ও জালালুর রহমান বিজয়, কর্মী সিমান্ত, আরমান, স্বপ্নের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ১০/১২ জন নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আলী আহসান, হিসাব বিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইমরান কবির, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইমতিয়াজ আহম্মেদকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বেধড়ক মারপিট করতে থাকলে তারা জীবন বাঁচাতে অধক্ষ্যের কক্ষে আশ্রয় নেয়। সেখানেও তাদের ওপর হামলা করতে যায় ছাত্রলীগ। এ সময় অধ্যক্ষ আব্দুস ছাত্তার বাঁধা দিতে গেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে লাঞ্ছিত করে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আলী আহসান জানান, অধ্যক্ষ স্যার আমাদের দাবি দাওয়া মেনে নিয়েছেন। এতে আমরা খুশি হয়ে মিষ্টি বিতরণ করছিলাম; কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর যেভাবে হামলা চালিয়েছে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। হামলাকারীদের কলেজ থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্ত্বা নিশ্চিত করতে হবে।

এ ব্যপারে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন জানান, সমাবেশের ব্যানার কেন তৈরি করা হলো তা নিয়ে আমরা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নেতাদের প্রশ্ন করেছিলাম। এর বেশি কিছু নয়; কিন্তু এ নিয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি করেছে। এসময় অধ্যক্ষ মাঝে থাকায় তিনিও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। ছাত্রলীগ ওই হামলার সাথে জড়িত নয়।

এ ব্যপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হারাগাছ থানার পুলিশ পরিদর্শক রাজিফুজ্জামান বসুনিয়া (তদন্ত) জানান, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের স্থানে ছাত্রলীগেরও সমাবেশ ছিল। এসময় সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মিষ্টি বিতরণ করলে সেখানে তাদের সাথে ছাত্রলীগের হাতাহাতি হয়েছে। এসময় ৩ শিক্ষার্থী অধ্যক্ষের রুমে আশ্রয় নিলে তাদেরকে উদ্ধার করে আমরা পরিবারের কাছে দিয়েছি। এখন ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত।

এ ব্যপারে অধ্যক্ষ আব্দুস ছাত্তার জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এসময় আমি তাদের বাঁধা দিতে গিয়ে আঘাত পেয়েছি। মঙ্গলবার স্টাফ কাউন্সিলেরর বৈঠকে এ ব্যপারে করণীয় ঠিক করা হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top