আজ নয়, কাল, এভাবে সিরিজ বৈঠক করেও ছাত্রদলের নতুন কমিটির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি এ লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটি। ছাত্রদলের নেতারা বলছেন, একটি অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠন করতেই যদি এত হিমশিম খেতে হয় তবে মূল দলের কী অবস্থা? তাদের দাবি, সংগঠনটির সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটির সদস্যরা ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনে ব্যর্থ হয়েছেন।
এমনই পরিস্থিতি লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করবেন। সার্চ কমিটি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় কমিটি গঠনের ভার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেই দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তবে এ নিয়ে ছাত্রদল নেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পরপর ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার কথা। বিশেষ করে বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের রেওয়াজ দীর্ঘদনের। কিন্তু কমিটি গঠনের ধারাবাহিকতা না থাকায় প্রায় ৮০ ভাগ নেতার ছাত্রত্ব নেই।
এমনকি বিভিন্ন শাখাগুলোতেও দীর্ঘ সময় ধরে নতুন কোনো কমিটি করা হয়নি। ফলে ছাত্রদলকে এর নেতিবাচক ফল ভোগ করতে হয়েছে ডাকসু নির্বাচনে। প্রথমে প্যানেল দিতে পারেনি। এমনকি নির্বাচনের ফলও ছিল শোচনীয়। এমনই পরিস্থিতিতে ছাত্রদলকে নতুন আঙ্গিকে সাজাতে চাইছে বিএনপির হাইকমান্ড।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজপথে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের মূল চালিকাশক্তি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি গঠন করা হয়। সে হিসাবে এই কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে। কমিটির ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে নতুন কমিটি গঠনের দাবি উঠে সংগঠনের সর্বত্র। একপর্যায়ে প্রায় চার বছর পর সংগঠনটির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন মাস দুই আগে।
তিনি সাবেক ছাত্রনেতাদের সাথে একাধিকবার স্কাইপে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এরপর ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একাধিকবার বৈঠক করেছে সার্চ কমিটি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি বৈঠক করে তারা। তবে ওই বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক নেতা।
সার্চ কমিটির সদস্যরা হলেন, ছাত্রদলের সাবেক নভাপতি শামসুজ্জামান দুদু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, আজিজুল বারী হেলাল, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম ও বর্তমান সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ছাড়াও কয়েকজন সাবেক নেতা। সিরিজ বৈঠকে আশানুরূপ কোনো ফল না আসায় বেশ কয়েকজন সদস্য বৈঠকে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। প্রতি বৈঠকেই কেউ না কেউ অনুপস্থিত থাকছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির নেতা ও নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা বলছেন, সার্চ কমিটি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়া যেমন খারাপ, তেমনই তারেক রহমানকে কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়াটা আরো জটিলতা সৃষ্টি করবে। কারণ তারেক রহমান প্রায় এক দশক ধরে দেশের বাইরে। তিনি ছাত্রদলের অনেক নেতাকে চেনেন না। বিশেষ করে বিগত দিনের রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে যেসব নেতাকর্মী সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তাদের সম্পর্কে তিনি অবগত নন। ফলে তিনি কিসের ভিত্তিতে কমিটি করবেন সে বিষয়টি অস্পষ্ট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের একাধিক নেতা বলেন, সার্চ কমিটিতে যাদের নাম রয়েছে তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ ‘পকেটের লোক দিয়ে’ কমিটি গঠন করতে চান। এ কারণে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন দায়িত্ব দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ওপর। তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেয়ায় সমস্যা আরো প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তো আর দলের সবাইকে চেনেন না। তিনি যাদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে কমিটি করবেন তারাও তো ‘নিজেদের পকেটের নেতাদের’ নাম তাকে দিতে পারেন। এ পরিস্থিতিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি হলেই ভালো হবে।
ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় আছেন, আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, এজমল হোসেন পাইলট, ইখতিয়ার রহমান কবির, মামুন বিল্লাহ, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, আব্দুল ওহাব, আসাদুজ্জামান আসাদ, ইসহাক সরকার, নুরুল হুদা বাবু, বায়েজীদ আরেফিন, মফিজুর রহমান আশিক, মেহবুব মাসুম শান্ত, মিয়া মো: রাসেল, গোলাম মোস্তফা, কাজী মোক্তার হোসেন, ওমর ফারুক মুন্না (জবি), আব্দুর রহিম, রাজীব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, মির্জা ইয়াসিন, আমির আমজাদ মুন্না, মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, নাহিদুল ইসলাম সুহাদ, আরজ আলী শান্ত প্রমুখ।
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সার্চ কমিটির সদস্য আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল নয়া দিগন্তকে বলেন, তারা একাধিকবার বৈঠক করেছেন। কিন্তু কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। নিজেরা আবার বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করে কমিটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। কবে নাগাদ ছাত্রদলের নতুন কমিটি হবে, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুততম সময়েই ছাত্রদলের নতুন কমিটি দেয়ার জন্য।
সূত্র জানায়, নিয়মিত ছাত্রদের ছাত্রদলের নেতৃত্বে আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেজন্য এ বছর ছাত্রদলের নতুন আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ হবে ছয় মাস। আহ্বায়ক কমিটি আগামী ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন কমিটি উপহার দেবে। তবে আহ্বায়ক কমিটির বিষয়টিও চূড়ান্ত নয়।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি, মামুনুর রশীদ মামুনকে সিনিয়র সহসভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৭৩৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। যেখানে ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পরপর নতুন কমিটি গঠনের কথা। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে গঠনতন্ত্র মেনে দুই বছর পরপর কমিটি করতে পারেনি ছাত্রদল।