বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে যে দৃশ্য ইতোপূর্বে কখনো দেখা যায়নি, এমন অভূতপূর্ব দৃশ্য এবার দেখতে যাচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেট। রচিত হতে যাচ্ছে নতুন ইতিহাস। তবে এই ইতিহাসের কৃতিত্বের পাশে লিখা থাকবে বাংলাদেশ ও টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার নাম। কি রয়েছে এই ইতিহাসের অন্তরালে?
ক্রিকেট থেকে বিদায়ের পর রাজনীতির মাঠে গিয়ে সফল হয়েছেন, এমন অনেক ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। তবে ক্রিকেট মাঠে থেকেই খেলা চালিয়ে যাওয়া এবং বিশ্বকাপের মতো আসরে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো সফলতা কারোরই নেই। যা একমাত্র বাংলাদেশ দলের কাপ্তান মাশরাফি বিন মুর্তজার রয়েছে। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে বিশ্বকাপের মাঠে দলের নেতৃত্ব দেয়ারও রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন তিনি। যা ইতিহাস এবং রেকর্ডেরই একটি অংশ হতে যাচ্ছে।
২৪ এপ্রিল পাকিস্তানের সাবেক স্পিডস্টার শোয়েব আখতার পিটিভির এক সাক্ষাৎকারে মাশরাফিকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘মাশরাফিকেই বিশ্বকাপের সেরা অধিনায়ক মনে করি। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল এবং এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছিল। অভিজ্ঞতায় ঠাসাপূর্ণ দল বাংলাদেশ।’
এবারের আসরে ২০১৫ ও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেয়া একমাত্র অধিনায়ক মাশরাফি। আর কেউ নেই যারা এর আগের বিশ্বকাপে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট পেয়েছে নতুন দিগন্তের আলো। মাশরাফির অধীনেই বাংলাদেশ শক্তিশালী পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল।
ক্রিকেটের পরাশক্তি ভারতে বিপক্ষে করেছে সিরিজ জয়, জয় পেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেও। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে এবং এশিয়া কাপের ফাইনালে নিয়ে যায় বাংলাদেশ দলকে। তার নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৭৩টি ওডিআই ম্যাচ খেলেছে, এরমধ্যে জয় পেয়েছে ৪০টি ওডিআইতে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একমাত্র সফল অধিনায়ক তিনি।
২০০১ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলার মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নড়াইলের ছেলে মাশরাফির অভিষেক হয়। অভিষেকের পর থেকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ডানহাতি এই পেসার ২০৫ ওডিআইতে ৪.৮১ ইকোনোমি রেটে নিয়েছেন ২৫৯ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে ৫৩ ইনিংসে নিয়েছেন ৪২ উইকেট। ৩৬ টেস্টে ৫১ ইনিংসে শিকার করেছেন ৭৮ উইকেট। ব্যাট হাতে দলের প্রয়োজনে খেলেছেন ছোট ছোট ঝড়ো ইনিংসও। ১৫১ ওডিআইতে একটি অর্ধশতকসহ ১ হাজার ৭৫২ রান রয়েছে মাশরাফির নামের পাশে।
ক্রিকেট ময়দানে থাকা অবস্থায়, দেশ ও জাতির কল্যাণার্থে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে নড়াইল-২ আসন থেকে মাশরাফি বিন মুর্তজা ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। ক্রিকেট মাঠ থেকে রাজনীতির মাঠে আসা জাতীয় দলের এই অধিনায়ক আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন। ক্রিকেটের মতোই উজ্জ্বল রাজনৈতিক অঙ্গনেও।
একজন ক্রিকেটার যখন ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করে, তারা পেশা বদলে ফেলেন। তবে কেউ বিদায়ের পরও ক্রিকেটের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতে স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন আবার কেউ ব্যাবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান। অবসরের পর অনেক ক্রিকেটারের আর দেখাও মেলে না। তবে সাম্প্রতিককালে ক্রিকেটাররা অবসরের পর ঝুঁকছেন রাজনীতির দিকে।
ক্রিকেট ইতিহাসে মাশরাফি ছাড়াও এমন অনেকেই আছেন যারা খেলার মাঠ থেকে বিদায় নিয়ে রাজনীতির মাঠে পা বাড়িয়েছিলেন।
ইমরান খান : এমন ব্যাক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে সফলতম উদাহরণ ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান। ক্রিকেট থেকে বিদায়ের পরেই ১৯৯৬ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন। রাজনৈতিক জীবনেও চমক দেখিয়ে তার তেহরিক-ই-ইনসাফ পকিস্তানের হয়ে মানুষের জনসমর্থনে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
নভোজোত সিং সিধু : ১৯৮৩ সালে ভারতীয় জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় তার। প্রায় ১৯ বছর ক্রিকেট মাঠে বেড়িয়ে ২০০৪ সালে ‘ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজিপি) যোগ দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তারপর দল পাল্টে ২০১৭ সালে কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
সানৎ জয়সুরিয়া : শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের সর্বকালে সেরা ওয়ানডে ব্যাটসম্যান বলা হয় তাকে। শ্রীলঙ্কার হয়ে অগণিত ম্যাচ জিতিয়েছেন। সাবেক লঙ্কান ওপেনার ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়ার পর ২০১০ সালে মারাঠা জেলা থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন এবং বর্তমান সরকারের অধীনে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
অর্জুন রানাতুঙ্গা : শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর বিদায় নিয়ে ক্রিকেট থেকে ২০০১ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন। শ্রীলঙ্কার জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ‘পিএ’র হয়ে মন্ত্রীর পদমর্যাদা পান।
এই তালিকায় আরো রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটার ভিনোদ কম্বলী, মনসুর আলী খান, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, মনোজ প্রভাকর ও কীর্তি আজাদ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ছাড়াও রাজনীতির মাঠে রয়েছেন সারফরাজ নেওয়াজ আমির সোহাইল। শ্রীলঙ্কান হাসান তিলকারত্নে। সম্প্রতি ভারতে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে নতুন করে রাজনীতির অধ্যায়ে নাম লিখিয়েছেন সাবেক গ্রেট ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার।
এছাড়াও এমন অনেক ক্রিকেটার রয়েছে যারা ক্রিকেট ছাড়ার পর রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। তবে মাশরাফির মতো ক্রিকেট ময়দানে থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে কেউ ছিলেন না।
উল্লেখ্য, আমাদের দেশে মাশরাফি প্রথম ক্রিকেটর নন যিনি ক্রিকেট থেকে রাজনীতির ময়দানে পা রখেছেন। ২০১৪ সাল থেকে মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ হিসেবে রাজনীতির মাঠে রয়েছেন দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়।