রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘ দায়িত্ব এড়াতে পারে না : বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ দায় এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বসংস্থায় নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেছেন, স্বেচ্ছা, নিরাপদ এবং মর্যাদার সাথে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন এবং তাদের ওপর চালানো সহিংসতার দায় নিরূপন করে দোষীদের বিচার করার মাধ্যমে চলমান সঙ্কটের টেকসই সমাধান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতিতে যৌন সহিংসতা’ বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের উন্মুক্ত আলোচনায় রাষ্ট্রদূত মাসুদ এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের ফলে সৃষ্ট যৌন সহিংসতার মতো অন্যায় করে অপরাধীরা পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি বিশ্ব অবলোকন করে যাচ্ছে। এ সব অপরাধের সমাপ্তি ঘটানো না গেলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর এই অপরাধসমূহের দায় নির্ধারণ ও বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই কেবল রোহিঙ্গাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব, যা তাদেরকে নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে উৎসাহিত করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।

রাষ্ট্রদূত মাসুদ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি প্রশ্ন রাখেন, আপনারা কি আশা করেন নারী ও শিশুদের ওপর আর কোনো যৌন সহিংসতা চালানো হবে না – এমন নিশ্চয়তা ছাড়া রোহিঙ্গারা নিজ দেশে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজী হবে?

যুদ্ধের অস্ত্র ও কৌশল হিসেবে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দ্বারা বাংলাদেশের মা-বোনেরা যে অবর্ণনীয় যৌন সহিংসতা ও নিপীড়নের স্বীকার হয়েছিলেন সেই ভয়াল স্মৃতির কথা তুলে ধরেন স্থায়ী প্রতিনিধি। তিনি বলেন, একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে রোহিঙ্গা সঙ্কটের ক্ষেত্রে। ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ এর হিসেবে সহিংস যৌন নির্যাতনের ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ২০১৮ সালে প্রায় চার হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে, যাদের গ্রহণ করতে মা পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। এ সব শিশুদের স্বীকৃতি, ক্ষতিপূরণ এবং নিজ দেশ মিয়ানমারে ভালো ভবিষ্যত নিশ্চিত করার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই আমলে নিতে হবে।

রাষ্ট্রদূত মাসুদ বাংলাদেশে যৌন নির্যাতন ও সহিংসতারোধে আইন, নীতিমালা ও তদন্ত ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, নির্যাতনের স্বীকার নারীদের সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং পুর্নবাসনসহ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সক্ষমতা বাড়ানোর সরকারি পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন করেন।

জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের যৌন সহিংসতারোধ বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেন, ২০১৮ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ডেনিস মুখউইজি ও মিজ্ নাদিয়া মুরাদ এবং ব্যারিস্টার অমল ক্লুনে নিরাপত্তা পরিষদে উন্মুক্ত এ আলোচনায় অংশ নেন। নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মে মাসের সভাপতি জার্মানি উচ্চ পর্যায়ের এ আলোচনার আয়োজন করেছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top