লোকসভা নির্বাচনে কোণঠাসা ভারতীয় মুসলিমেরা

বিশ্বে সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক চর্চার অনুশীলন হচ্ছে ভারতে। সেখানে পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ লোকসভার নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছেন মুসলিমরা। তাই তাদের মধ্যে তেমন উল্লাস নেই। লোকসভায় আসন ৫৪৩। তার মধ্যে বিদায়ী লোকসভায় মুসলিম ছিলেন মাত্র ২২ জন। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে মুসলিমরা সংখ্যায় বেশি। তারা ১৩০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে শতকরা প্রায় ১৪ ভাগ।

কিন্তু লোকসভায় তাদের প্রতিনিধিত্ব আছে শতকরা মাত্র চার ভাগের। পাঁচ দশকের মধ্যে এটা হলো সেখানে সবচেয়ে কম মুসলিম প্রতিনিধিত্ব। এক দশক আগে তারা ছিলেন শতকরা ৬ ভাগেরও বেশি। আর ১৯৮০ সালে তাদের হার ছিল সবচেয়ে বেশি ৯.৬ ভাগ।

২০১৪ সালের নির্বাচনে রেকর্ড ২৮২ আসনে বিজয়ী হয় বিজেপি। এর মধ্যে একজনও এমপি ছিলেন না মুসলিম সম্প্রদায়ের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে গত পাঁচ বছরে বিধানসভাগুলোতেও মুসলিম প্রতিনিধিত্ব কমে গেছে। সমালোচকরা বলেছেন, বিজেপি মুসলিমবিরোধী যে বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছে তার কারণে এমনটা হয়েছে। ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশ। সেখানে চার কোটির ওপরে মুসলিম বসবাস করেন। সেই রাজ্য থেকেও ২০১৭ সালে একজন মুসলিমকে প্রার্থী করেনি বিজেপি। মোদির নিজের রাজ্য গুজরাট। সেখানেও ২০১৭ সালের নির্বাচনে একজন মুসলিম প্রার্থীকে নির্বাচনের টিকিট দিতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। উভয় রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরেছে এই ডানপন্থী দলটি।

ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে দেখা হয় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসকে। এই দলটি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য গর্ব করে। তারাও সাম্প্রতিক দশকগুলোতে মুসলিমদের এড়িয়ে চলা শুরু করেছে। গত বছর কংগ্রেসের সাবেক প্রধান সোনিয়া গান্ধী বলেছিলেন, বিজেপি জনগণকে আশ্বস্ত করতে পেরেছে যে, কংগ্রেস হলো একটি মুসলিম দল। এ ছাড়া তার ছেলে ও দলের বর্তমান সভাপতি রাহুল গান্ধী হিন্দু মন্দির সফর করেছেন। তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এসব দিয়ে মোদির ওই ধারণার ওপর প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা হয়েছে।

গত পাঁচ বছরকে দেখা হয় মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধ বৃদ্ধি হিসেবে। মানুষ, বিশেষ করে মুসলিমরা গরু রক্ষাকারী গ্রুপের হাতে প্রহৃত হয়েছেন। তাদেরকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। ফ্যাক্ট চেকার ডট ইন অনুযায়ী, ২০০৯ সালের পর থেকে ৭৯টি ভয়াবহ এমন ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত পাঁচ বছরে ঘটেছে ৭৬টি ঘটনা। অন্য দিকে ঘৃণামূলক এসব অপরাধে যারা জড়িত তাদেরকে ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতারা সম্মানিত করেছেন।

গরু ব্যবসা করার কারণে একজন মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছিল। এ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ৮ ব্যক্তি গত বছর যখন জামিনে মুক্তি পান তখন তাদের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দিয়ে বরণ করে নেন মোদির মন্ত্রিসভার সদস্য জয়ন্ত সিনহা। তা নিয়ে খুব বিতর্ক হয় তখন।
তবে বিজেপি মুখপাত্র কোহলি বলেছেন, এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজে। ওই রকম অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এতে আমরা হস্তক্ষেপ করছি না।

সূত্র : আলজাজিরা

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top