বিএনপি থেকে নির্বাচিত আজ শপথ নেয়া এমপি জাহিদুর রহমান জাহিদ জানিয়েছেন, সংসদে গিয়ে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানাবেন। দল বহিষ্কার করলেও তিনি দলেই থাকবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল) আসন থেকে এমপি হওয়া জাহিদ আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে শপথ নেয়ার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
বিএনপি থেকে নির্বাচিতদের মধ্যে তিনিই প্রথম শপথ নিলেন। বিএনপি থেকে নির্বাচিত আর পাঁচজন এখনো শপথ নেয়ার বাকি।
বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোটের ওই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানালেও তা উপেক্ষা করে গণফোরামের সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান এর আগে শপথ নেন। বিএনপির জাহিদুর রহমানও এবার একই পথে হাঁটলেন।
দলের সিদ্ধান্ত না মানার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে তাকে নির্বাচিত করেছে এলাকার জনগণ। তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতেই তিনি শপথ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এটা দলের সিদ্ধান্তের বাইরেই। আমি দীর্ঘদিন অপেক্ষা করলাম। যেহেতু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি, এলাকার মানুষের প্রচণ্ড চাপ। ঢাকায় এই পনের দিন ধরে আছি, এলাকার মানুষের একটাই বক্তব্য- শপথ নিয়ে ফিরে আসেন।’
সংসদে আসার আগে দীর্ঘ ৩০ বছর মাঠের লড়াইয়ে ছিলেন জানিয়ে জাহিদ বলেন, ‘আমি এবার নিয়ে চতুর্থবার নির্বাচন করলাম। এ আসনটি আমাদের বিএনপির ছিল না। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনটি আওয়ামী লীগের। এই প্রথম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বিজয়ী হতে সক্ষম হয়েছে।’
শপথের বিষয়ে দলের কোনো পর্যায়ে কথা হয়েছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আগে বলেছি। দেখাও করেছি। কোনো প্রকারে সম্মতি দেয়নি। দল শপথ নেবে না- এখনো পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্তই ফাইনাল।’
দল বহিষ্কার করলে কী করবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে সাংসদ জাহিদ বলেন, ‘আমার বিষয়ে দল যেন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেটা জেনেশুনেই শপথ গ্রহণ করেছি। দল যদি মনে করে বহিষ্কার করবে- করতেই পরে। বহিষ্কার করলেও কিন্তু আমি দলে আছি। আমি এই দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। সেই ছাত্রজীবন থেকে দীর্ঘ ৩৮ বছর এই দলের সাথে সম্পৃক্ত। কাজেই বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি তো বিএনপি থেকে বহিষ্কার হব না। আমি আছি।’
সংসদে কী ভূমিকা রাখবেন- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সংসদে যে ভূমিকা রাখা দরকার তা তিনি রাখতে চান। বলেন, ‘আমার নেত্রী একজন বয়স্ক মহিলা, ৭৩ বছর বয়স। উনাকে যেন গণতন্ত্রের স্বার্থে মুক্ত করে দেয়া হয়, সংসদে এই আহ্বান জানাব। এটাই সংসদ সদস্য হিসেবে আমার প্রথম অঙ্গীকার।’
‘আর এলাকার হাজার হাজার নিরাপরাধ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাব। বলব, আপনি এগুলো দেখেন। এগুলোর বাদী পুলিশ। পুলিশ যা করেছে সব মিথ্যা মামলা করেছে। আপনার লোক কোনো মামলা করেনি। এটা দেখা উচিত। গণতন্ত্রের স্বার্থে সেইসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি রাখব।’
৩০ ডিসেম্বরের এ নির্বাচনে ওই আসনে তিন সাবেক সংসদ সদস্যকে হারিয়ে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী জাহিদুর রহমান।
জাহিদুর রহমান (ধানের শীষ) ৮৮ হাজার ৫১০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: ইমদাদুল হক। তিনি ৮৪ হাজার ৩৮৫ ভোট পান। এ ছাড়া মহাজোটের প্রার্থী মো: ইয়াসিন আলী (নৌকা) ৩৮ হাজার ৬৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ (লাঙ্গল) ২৭ হাজার ১৮২ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন।
রংপুর বিভাগের মধ্যে জাহিদুর রহমানই একমাত্র বিএনপির প্রার্থী, যিনি জয়ী হতে পেরেছেন।