গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া। দলের কাউন্সিল শেষে সপ্তাহখানেক পরে এ ব্যাপারে ঘোষণা আসতে পারে। ড. রেজা কিবরিয়া গত বছর নভেম্বরে আওয়ামী লীগ ছেড়ে ড. কামাল হোসেনের গণফোরামে যোগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, রেজা কিবরিয়াকে দলের সাধারণ সম্পাদক করতে ড. কামাল হোসেন বেশি আগ্রহী। বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সব দিক থেকে সক্রিয় এমন ব্যক্তিত্বকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদটি দিতে চান তিনি। তবে দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে একেবারে নিষ্ক্রিয় রাখা হবে না। গণফোরামকে আরো সুসংগঠিত ও ঐকবদ্ধ করতে ড. কামাল হোসেন দলের মোস্তফা মহসিন মন্টুকে রেজা কিবরিয়াকে সার্বিক সহায়তা দিতে পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে দলের কাজে রেজা কিবরিয়া কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়েন।
জানা গেছে, আগামীকাল ২৬ এপ্রিল দলের যে বিশেষ কাউন্সিল ডাকা হয়েছে তাতে এ বিষয়টি ফয়সালা হবে। গণফোরাম এ ‘বিশেষ কাউন্সিল’ আগামীকাল সকাল ১০টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে (কাজী বশীর মিলনায়তনে) অনুষ্ঠিত হবে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে ১৯৯৩ সালে গঠন করেন গণফোরাম। ১৯৯২ সালের ১৯ এবং ২০ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যের পদ থেকে বাদ পড়েন ড. কামাল হোসেন।
১৯৯৩ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে গণতান্ত্রিক ফোরামের তিন দিনব্যাপী জাতীয় মহাসম্মেলন আহবান করা হয়। এ সম্মেলনের মাধ্যমে ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট রাজনৈতিক দল গণফোরাম গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময় তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির সংস্কারবাদী অংশ, পঙ্কজ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ন্যাপ এবং শাহজাহান সিরাজের নেতৃত্বে জাসদের অংশ গণফোরামের সাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামে যোগ দেন সিপিবি নেতা সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, ন্যাপ নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম, আবুল মাল আবদুল মুহিত (সাবেক অর্থমন্ত্রী), শাজাহান সিরাজ (পরে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী)। দলের প্রথম আহবায়ক কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর পরে হন সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক। তার মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দু’জন দায়িত্ব পালন করেন। তারা হলেন ইঞ্জিনিয়ার কাসেম ও অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। ২০১১-এর ২৯ আগস্ট মোস্তফা মহসিন মন্টু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
জানা গেছে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলকে তুলে ধরতে সাধারণ সম্পাদক পদটিতে একজন প্রভাবশালী নেতৃত্ব চান ড. কামাল। সে দিক থেকে রেজা কিবরিয়া হচ্ছেন তার পছন্দের ব্যক্তি এবং তাকেই তিনি এ পদটি দেবেন বলে দলের বিভিন্ন স্তরে শোনা যাচ্ছে।
রেজা কিবরিয়ার সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক নীতিসংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৩৪ বছরের বেশি কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে বিএ (রাজনীতি, দর্শন ও অর্থনীতি), কুইন্স ইউনিভার্সিটি (কানাডা) থেকে এমএ এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমফিল (অর্থনীতি) ও ডি. ফিল (অর্থনীতি) ডিগ্রি লাভ করেন। তার পেশাজীবন শুরু হয় ওয়াশিংটন ডিসির আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ)’।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দলের অন্যসব পদেও ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। সুশীলসমাজের একটি বড় অংশও দলে যোগ দিতে পারেন। এ ব্যাপার সার্বিক সিদ্ধান্ত নিতে ড. কামাল হোসেনকে সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে।