মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের মো: মাহবুবুর রহমানের মামলার রায় ঘোষণা যেকোনো দিন।
রাষ্ট্র ও আসামি উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আজ বুধবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ করে (সিএভি) আদেশ দেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত। তার সাথে ছিলেন তাপস কান্তি বল।
অন্যদিকে, আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তানিম।
এর আগে গত বছরের ২৮ মার্চ মো: মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। গতবছরের ১১ ফেব্রুয়ারি এই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। রণদা প্রসাদ সাহা হত্যায় অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের মো: মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগ আনা হয়।
গত বছরের ২ নভেম্বর দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা হত্যায় অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের মো: মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থা। তিনটি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান। তার সাথে ছিলেন জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক।
আসামি মাহবুবুর রহমানের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মুক্তিযুদ্ধের সময় মির্জাপুর শান্তিকমিটির সভাপতি ছিলেন। আসামি মাহবুবুর রহমান ও তার ভাই আব্দুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন।
আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালায়।
অভিযানে রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও রণদা প্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ সাতজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে সবাইকে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। তাদের লাশ আর পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তার আশপাশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউস এলাকায় অপরাধ সংঘটন করে। তদন্তে মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অপহরণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগ আনা হয়।
রণদা প্রসাদ সাহার পৈত্রিক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এক সময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন রণদা প্রসাদ সাহা। থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদিখানে। সে বাড়ি থেকেই তাকে, তার ছেলে ও অন্যদের ধরে নিয়ে যায় আসামি মাহবুবুর রহমান ও তার সহযোগীরা।