বাদপড়া মন্ত্রী-এমপিদের দলীয়ভাবে কদর বাড়ছে। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব নেতা, এমপি পদে মনোনয়ন পাননি এবং যেসব নেতা-মন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি আগামী সম্মেলন সামনে রেখে ওইসব নেতা-মন্ত্রীকে নিয়ে নতুনভাবে পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। তৃণমূল সংগঠন শক্তিশালী করা এবং দল পরিচালনায় পোড় খাওয়া নেতাদের বিশেষভাবে মূল্যায়ন করার চিন্তা রয়েছে দলটির। ইতোমধ্যে বাদপড়া মন্ত্রীদের কেউ কেউ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ পেয়েছেন। এছাড়া বাদপড়া বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী সংসদীয় কমিটিতে স্থান পেতে পাইপলাইনে আছেন। আগামী সম্মেলনে বাদপড়াদের কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি, আমির হোসেন আমুকে শিল্প মন্ত্রণালয়, তোফায়েল আহমেদকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মোহাম্মদ নাসিমকে খাদ্য মন্ত্রণালয়, বেগম মতিয়া চৌধুরীকে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় ৪৭ জন ঠাঁই পেয়েছেন। স্থান পেয়েছেন বেশ কয়েকজন নতুন মুখ। বিগত মন্ত্রিসভার ২৫ মন্ত্রী, ৯ প্রতিমন্ত্রী ও ২ উপমন্ত্রী এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। বাদপড়াদের মধ্যে রয়েছেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শাজাহান খান, মোস্তাফিজুর রহমান, আসাদুজ্জামান নূর, শামসুর রহমান শরীফ, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, মো: কামরুল ইসলাম, নারায়ণচন্দ্র চন্দ, এ কে এম শাহজাহান কামাল, আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এবং আরিফ খান জয়। শেষোক্তজন নির্বাচনে মনোনয়নও পাননি। জোট নেতাদের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন হাসানুল হক ইনু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রাশেদ খান মেনন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মসিউর রহমান রাঙ্গা এবং মুজিবুল হক চুন্নু।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি পদে মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন। ওই চার নেতা নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি ছিলেন। অন্য দুই সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও আহমদ হোসেন বার বার মনোনয়নবঞ্চিত হলেও কেন্দ্রের ওই ৬ নেতা জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দলীয় সূত্র জানায়, আগামী ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বর্তমান সরকার। আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিও দলকে গুছিয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে। এ জন্য আগেভাগেই দলকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
সরকার থেকে দলকে যতটুকু সম্ভব আলাদা করে পরিচালনা করবে আওয়ামী লীগ। শুধু তৃণমূল সুসংগঠিত করে গত নির্বাচনে বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় ৬ নেতাকে আগামী সম্মেলনে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করারও চিন্তা রয়েছে। এছাড়া বাদপড়া প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপিকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে উদযাপন করার চিন্তা রয়েছে দলটির হাইকমান্ডের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভা গত ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দলীয় প্রধান ওই নেতাদের আগামীতে মূল্যায়ন করার কথাও জানান। দলীয় সূত্র জানায়, ১৪ দলীয় জোটকে চাঙা রাখতে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন জোটের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মোকাবেলায় সক্রিয় রয়েছেন মোহাম্মদ নাসিম, তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসনে আমু। এসব অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ দলীয়ভাবে সক্রিয় থাকলে তৃণমূল নেতাকর্মীরাও চাঙা থাকেন।
আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এ প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, তৃণমূল শক্তিশালী করার জন্য কিছু পরিকল্পনা দলের সব সময় থাকে। তা ছাড়া গত নির্বাচনে কেন্দ্রের যেসব নেতা এমপি নির্বাচন না করে দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ওইসব নেতাকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করার কথা বলেছেন। আগামী সম্মেলনে তাদের প্রত্যেককে মূল্যায়ন করা হবে।