আসন্ন রমজানে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
গত ১৭ এপ্রিল সারাদেশে পাঠানো বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনিশ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বাজার স্থিতিশীল রাখতে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক ও অবৈধ মজুদ প্রতিরোধ করতে হবে। এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম জোরদারসহ প্রয়োজনীয় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। চিঠিতে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রমজান মাসে ভেজাল বিরোধী অভিযান জোরদার করতে বলা হয়েছে।
এদিকে রমজানের আগেই দাম বাড়ছে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের। গত দেড় মাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেল, পিঁয়াজ, রসুন, ছোলা, আটার দাম বেড়েছে। এ তালিকায় রয়েছে গরুর মাংসও।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খুচরা বাজারদরের তালিকাতেও পণ্যগুলোর দাম বাড়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একটা সময় ব্যবসায়ীরা রমজানের পণ্যের দাম বাড়াতেন। এতে তাদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হতো। কিন্তু এখন তারা রমজানের আগেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এ কারণে রমজানের প্রায় দুই সপ্তাহ বাকি থাকতেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। যাতে রমজানের সময় এটা নিয়ে ভোক্তাদের তোপের মুখে পড়তে না হয়।
টিসিবির হিসেবে দেড় মাসের ব্যবধানে দেশি পিঁয়াজ ২২ দশমিক ২২ শতাংশ, রসুন ২০ শতাংশ, ছোলা ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ, প্যাকেট আটা ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ১ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ দাম বেড়েছে। এছাড়া গরুর মাংসের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে দেশি পিঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকা, আমদানিকৃত পিঁয়াজ ২২ থেকে ২৫ টাকা, দেশি রসুন ৫০ থেকে ৭০ টাকা, আমদানিকৃত রসুন ১০০ থেকে ১১০ টাকা, ছোলা ৭৫ থেকে ৯০ টাকা, ১ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ১০০ থেকে ১০৬ টাকা, প্যাকেট আটা ৩৪ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু দেড় মাস আগে দেশি পিঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকা, আমদানিকৃত পিঁয়াজ ২০ থেকে ২২ টাকা, দেশি রসুন ৪০ থেকে ৬০ টাকা, আমদানিকৃত রসুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ছোলা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ১ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৯৫ থেকে ১০৩ টাকা, প্যাকেট আটা ৩২ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা দেড় মাস আগে ছিল ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণে নিত্যপণ্য মজুত আছে। তাই কোনো পণ্যের দাম বাড়ার কারণ নেই।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সারা বছর ভোজ্যতেলের চাহিদা ১৮ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজানেই চাহিদা ৩ লাখ টন। চলতি অর্থবছরের ৯ মার্চ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৬৯ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। এই সময়ে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে ১৭ লাখ ৬৬ হাজার টনের।
চিনির চাহিদা বছরে ১৮ লাখ টন। এর মধ্যে রমজানে চাহিদা ৩ লাখ টন। গত ৯ মার্চ পর্যন্ত চিনি আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৭৩ হাজার টন। এই সময়ে এলসি খোলা হয়েছে ১২ লাখ ৪৭ হাজার টন চিনির। ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী রোজার মাসে ছোলার চাহিদা ৮০ হাজার টন। কিন্তু ছোলা আমদানি হয়েছে ১ লাখ টনের বেশি।
আরও পড়ুন: শ্রম নিরাপত্তায় স্বীকৃতি মিলেছে বাংলাদেশের
পিঁয়াজের আমদানি ও সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। সারা বছর পিঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উত্পাদিত হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। চলতি অর্থবছরের এখন পর্যন্ত ৬ লাখ টনের বেশি পিঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এছাড়া এখন দেশে পিঁয়াজের মৌসুম, তাই এসব পণ্যের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।