বিএনপি কারো সাথে দরকষাকষি করে না : রিজভী

বিএনপি কারো সাথে দরকষাকষি করে না জানিয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভী বলেছেন, মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকান্ডে জড়িতদের জনরোষ থেকে বাঁচাতে সরকার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নুসরাতকে নিপীড়ন চালিয়ে তার মুখ বন্ধ করতে গায়ে আগুন দিয়ে বর্বর কায়দায় হত্যার ঘটনায় সেখানকার আওয়ামী লীগের মিডনাইট এমপি, আওয়ামী লীগের স্থানীয় সভাপতি থেকে শুরু করে বড় বড় নেতারা জড়িত।

তাদের সহযোগিতা করেছে এসপি থেকে থানার ওসি পর্যন্ত। ফলে তাদের এমপি-নেতা ও পুলিশ প্রশাসনকে জনরোষ থেকে বাঁচানোর জন্য ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। সোনাগাজীর ঘটনার মতোই ক্ষমতাসীন দলের বেপরোয়া নেতা-কর্মীরা গোটা দেশকে ধর্ষনের উপত্যকায় পরিণত করেছে। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নাজমুল হক নান্নু, অধ্যাপক সাহিদা রফিক, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলায় জোর করে বন্দি রেখে বিনা চিকিৎসায় প্রাণনাশের চেষ্টা চলছে। তাকে পিজি হাসপাতালে রাখা হলেও উপযুক্ত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। শেখ হাসিনার নির্দেশ মতোই তাকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে। আমরা দাবি করছি অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। জামিনে প্রতিবন্ধতা করা চলবে না। তিনি মুক্তি পেয়ে নিজের পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা দেবেন। একদলীয় হানাদারি শাসনের অন্ধকার দূর করে আলোর প্রত্যাশায় দেশনেত্রীর মুক্তির প্রহর গুনছে এদেশের জনগণ। দেশে পুলিশী শাসন কায়েম করা হয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির প্রতীক খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা যাবে না।

‘খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে দরকষাকষি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে’ এবং ‘৩০ এপ্রিলের মধ্যে জানা যাবে বিএনপি থাকবে কি থাকবে না’ আওয়ামী লীগের নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতা বলেন, খালেদা জিয়া আপোসহীন নেত্রী হিসেবেই জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত। তিনি কখনোই কোনো অন্যায় কিংবা কোনো স্বৈরাচারের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। দরকষাকষির দৃষ্টান্ত কার আছে সেটি আওয়ামী নেতারা নিজেরাই জানেন, আর না জানলে আপনাদের নেত্রীকে জিজ্ঞেস করুন।

এরশাদের নির্বাচনে যে যাবে সে জাতীয় বেঈমান হবে বলে আপনার নেত্রী দরকষাকষি করে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

জাতীয় বেঈমানের মুকুট তিনি নিজেই নিজের মাথায় পরে ক্ষমতার হালুয়া-মোরব্বার ভাগ পেয়েছিলেন। কিভাবে একটি অবৈধ ও অসাংবিধানিক ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করে ক্ষমতায় এসেছিলেন সেটিও নিশ্চয়ই আপনি ভুলে যাননি। অগণতান্ত্রিক সরকারের সাথে দরকষাকষি ও দেন-দরবারের ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের, বিএনপির নয়।

দেশে নারী নির্যাতন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা ধর্ষন-নারী নির্যাতন-খুন-দখল ও গুমের উৎসবে মেতে উঠেছে। নারী প্রতি সহিংসতা এখন ইতিহাসের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। নারী নিপীড়ন ও খুন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ১৯৭২-৭৫ এর চাইতেও এখন দেশের অবস্থা ভয়াবহ। প্রতিদিন একটির পর একটি লোম শিউরে ওঠার মতো ঘটনা ঘটলেও গণবিচ্ছিন্ন এই সরকারের কোনো বিকার নেই। এভাবে দেশ চলতে পারে না। সমাজের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ইতিহাসের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সমাজে এখন আর কেউ নিরাপদ নয়।

ম্যান্ডেটবিহীন সরকারের কারণে সামাজিক ভায়োলেন্স এতো তীব্র হয়েছে যে, দেশে ‘সোশ্যাল ফেব্রিকস’ ভেঙ্গে গেছে। রাজনীতিকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে নির্বাসনে। সমাজবিরোধীরা সরকারী দলের আনুকুল্যে নারীদেরকেও দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। গোটা রাষ্ট্রকাঠামোই এখন ধ্বসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। প্রতিদিন নৈরাজ্যের এই কাহিনী গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে হেডলাইন হয়ে। আর এজন্য দায়ী অবৈধ মিডনাইট সরকার।

কারাবন্দি দলের নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বারব গুরুতর অসুস্থ উল্লেখ করে তিনি বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ভীষণ অস্স্থু। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলেও যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে পুনরায় কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়। এটা অমানবিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। অবিলম্বে বাবরকে সুচিকিৎসা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

একইভাবে গুরুতর অসুস্থ যুব দলের কারাবন্দি সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সুচিকিৎসাসহ বন্দি নেতা সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আসলাম চৌধুরী, ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, সোহরাব উদ্দিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, শেখ রবিউল আলম, শেখ মোহাম্মদ শামীম, হযরত আলী, মিয়া নুরউদ্দিন অপু, ইসহাক সরকারের মুক্তির দাবি জানান রিজভী।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top