হালদার কান্না

হালদা, যে নদীর সাথে মিশে আছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য। চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান নদী। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িয়া এলাকা থেকে উৎসারিত হয়ে ফটিকছড়ির উত্তর-পূর্ব কোণ দিয়ে চট্টগ্রামে প্রবেশ করেছে। পাহাড় উত্তরে রেখে হালদা নদী দক্ষিণ-পশ্চিম বরাবর প্রবাহিত হয়ে আবার দক্ষিণ গতিপথে এর মূল অববাহিকা ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, হাটহাজারী, রাউজান ও চট্টগ্রাম শহরের বিবিরহাট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান অতিক্রম করে গেছে। কালুরঘাটের কাছে এটি কর্ণফুলী নদীতে এসে মিশেছে। এর দৈর্ঘ্য ৮০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার।

হালদা রুপালি সম্পদের খনি। এ নদী থেকে প্রতি বছর প্রচুর মাছ আহরিত হয়। কিন্তু বর্তমানে কিছু লোভী ও দুর্বৃত্ত, ভূমিদস্যু এবং মৎস্যজীবী হামলে পড়ছে হালদায়। ফলে হালদা আজ হুমকিতে। এ বেহাল দশার জন্য দায়ী আমরাও। কারণ, আমরা নদী বাঁচাতে আজো ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। হালদাকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসছি না। তাই আমরাও আজ অপরাধী। বিশ্বের মিঠাপানির কার্পজাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা। আজ যেন হালদার কান্না শোনার কেউ নেই। প্রতিদিন এ নদীর আর্তনাদ শুনেও আমরা শুনছি না। চারপাশে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।

স্থানীয় পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, এ নদীতে মা-মাছের প্রজনন ক্ষমতা কমে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্য মতে, প্রতিদিন মা-মাছগুলোই মৃত ভেসে ওঠে। নদীতে নিষিদ্ধ যান্ত্রিক যানের (ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ড্রেজার) অত্যাচারে এমনটি হচ্ছে। দিন দিন এ সমস্যা বেড়েছে। এসব যানের ডুবন্ত ঘূর্ণায়মান পাখার আঘাতে মা-মাছসহ নদীর মৎস্যকুলের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। এতে মা-মাছের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু এ সমস্যা সমাধান কে করবে? আমরা সবাই এমন ভাব করছি; মাছ মরলে আমার কী? নদী মরলে আমার কী? আমরা দেশকে ভালোবাসি, না দেশের মানুষকে। যদি ভালোবাসতাম তাহলে নদীগুলো এভাবে মেরে ফেলতাম না। আমরাই নদীতে বর্জ্য আর রাসায়নিক ফেলছি। এতে পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। এখন হালদা নদীতে পানি আছে, কিন্তু খাওয়ার পানি নেই কোথাও, যা সত্যিই মর্মান্তিক।

আমাদের যা আছে, তাই নিয়ে নতুনভাবে বেঁচে থাকতে হবে। বাঁচাতে হবে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রতিটি নদীই জাতির অমূল্য সম্পদ। হালদা নদীর এ ক্ষতি শুধু চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের জন্যও বিরাট ক্ষতি। হালদাকে রক্ষা করতে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে দখল-দূষণকে। প্রশাসনের পাশে এ জন্য থাকতে হবে আমাদের। মনে রাখতে হবে, হালদা আমাদের বন্ধু। তাকে বাঁচাতে অবশ্যই সংগ্রাম করতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, ওমরগনী এমইএস

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top