জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ডকে। হচ্ছে হবে করে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। এমনই পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার বিকেল চূড়ান্ত বৈঠকে বসবেন ছাত্রদলের কমিটি গঠনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্চ কমিটির নেতারা।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও স্কাইপের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলবেন। কোন প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠন করা হবে তা নিয়ে শেষবারের মতো আলোচনা হবে। তারেক রহমানের সাথে শেষ এই বৈঠক থেকেই ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে।
দুদিন পর ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সব নেতাকর্মীর সাথে বৈঠকে বসবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি ওই বৈঠকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদেরকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিবেন। তারপর যেকোনো সময় ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী বছরের ১ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্ব তরুণদের হাতে তুলে দিতে বদ্ধপরিকর বিএনপির হাইকমান্ড। তার আগে বর্তমান কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে একটি স্বল্প মেয়াদি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। যর মেয়াদ হবে আগামী বছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি নির্বাচিত করার ব্যাপারে অধিকাংশের মত। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এ বিষয়ে সহমত পোষণ করেছেন।
বর্তমান কমিটির শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে বাদ দিয়ে ভোটগ্রহণ হতে পারে। যদিও ভোটগ্রহণের পদ্ধতি বা অন্যান্য কিছু প্রক্রিয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি এ লক্ষ্যে গঠিত ‘সার্চ কমিটি’। সুতরাং ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা নিয়ে এক ধরনের জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, কয়েকদিন আগে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের লক্ষ্যে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। যাকে অনেকেই ‘সার্চ কমিটি’ বলে অভিহিত করছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সংগঠনের সাবেক শীর্ষ নেতারা (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) ছাত্রদলের বর্তমান নেতাদের সাথে পর্যায়ক্রমে একাধিক মতবিনিময় সভা করেছেন। যদিও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে তারা এখনো পৌঁছতে পারেননি। তবে ছাত্রদলের বেশির ভাগ নেতা একটি স্বল্প মেয়াদি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পক্ষে মত দেন। যে কমিটি প্রকৃত ছাত্রদের হাতে ছাত্রদলের দায়িত্ব তুলে দিবে। অর্থাৎ আগামী বছরের ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে।
জানা গেছে, আহ্বায়ক কমিটির আকার হবে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট। এই কমিটির প্রথমসারির ১০ থেকে ১২ জন নেতা কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন মর্মে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল । এখন এই সিদ্ধান্ত থেকে সংশ্লিষ্টরা সরে এসেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মেয়াদ ফুরিয়েছে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর। প্রায় পাঁচ বছর পর ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। বিশেষ করে গত ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে আশানুরূপ ভোট না পাওয়ায় ছাত্রদলের করুণ পরিণতি দলটির হাইকমান্ডের নজরে আসে। এর পরই ছাত্রদলকে নতুনভাবে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতৃত্বের বয়স নির্ধারণ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। কেউ বলছেন বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়রদের সমন্বয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে। আবার একটি পক্ষ চাইছে একেবারে জুনিয়রদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে। এমন খবরে ছাত্রদলের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা যে যার মতো করে বিএনপির সিনিয়র ও ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন।
ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় আছেন- আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, এজমল হোসেন পাইলট, ইখতিয়ার রহমান কবির, মামুন বিল্লাহ, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, আব্দুল ওহাব, আসাদুজ্জামান আসাদ, আবুল হাসান, নূরুল হুদা বাবু, বায়েজীদ আরেফিন, মফিজুর রহমান আশিক, মেহবুব মাসুম শান্ত, মিয়া মো: রাসেল, গোলাম মোস্তফা, কাজী মোক্তার হোসেন, আব্দুর রহিম, রাজীব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, মির্জা ইয়াসিন, আমির আমজাদ মুন্না, মিনহাজুল ইসলাম ভুঁইয়া, নাহিদুল ইসলাম সুহাদ, আরজ আলী শান্ত প্রমুখ।