চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বিপর্যয়ের আশঙ্কা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অন্তত ৫০ ভাগ আম কম উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে লাগাতার আমের মূল্য না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত আমচাষিদের যথাযথভাবে বাগান পরিচর্যার অভাব এবং সেই সাথে বৈরী আবহাওয়া কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

এ অঞ্চলের আমবাগানগুলোতে মুকুল আসে দুই ধাপে। মওসুমের শুরুতেই যে মুকুল এসেছিল তাতে বড় একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়নি। তবে নাবী মুকুল বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উত্তরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি উপজেলা শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাটের বাগানগুলোতে ছিল নাবী মুকুল। ফলে এ এলাকার প্রায় প্রতিটি আমবাগানে শেষ ফেব্রুয়ারির বৃষ্টিতে পরাগায়নের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। তিন দিনের বৃষ্টিতে প্রায় অর্ধেক মুকুল ঝরে পড়ে। একমাত্র সদর উপজেলার আমবাগানগুলো আগাম মুকুলের সুবাদে এই ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ দিকে এ বছর আমচাষিরা বাগান পরিচর্যায় ছিলেন অনেকটাই নিস্পৃহ। তিন বছর ধরে অব্যাহতভাবে আমের প্রকৃত বাজারমূল্য না পেয়ে আমচাষিদের মাথায় হাত ওঠে। বাণিজ্যে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। বেশির ভাগ আমচাষি এ বছর বাগান কেনা থেকে বিরত থেকেছেন। যেখানে সারা বছর ধরে আমবাগানের ফল পাতা-ফুলে বেচা কেনা হয় সেখানে এবার বাগান মালিকেরা এক রকম ক্রেতার অভাবে অলস বছর কাটিয়েছেন। মূলত বাগান পরিচর্যা হয় এসব ফল ক্রেতাদের হাত ধরেই। তাই এ বছর অনেকাংশে অবহেলিত থেকেছে বাগান পরিচর্যা। আর তাতেই ফলন হ্রাসের বিষয়টি প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাব মতে, এ বছর ৩১ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে দুই লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। মূলত এটি গত বছরের লক্ষ্যমাত্রার সমান। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো: ইয়াছিন আলী জানান, মওসুমের শুরুতে ভালো মুকুল হওয়ার সুবাদে গত বছরের মতোই এবার উপরিল্লিখিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টির কারণে নাবী মুকুলের ক্ষতি সাধন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় উৎপাদন হ্রাস পাবে বলেও তিনি মনে করেন।

এ দিকে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র তথা আম গবেষণা কেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: সফিকুল ইসলাম এ বছর আম উৎপাদনের পরিমাণ দেড় লাখ টনের বেশি হবে না বলে ধারণা ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারির তিন দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে নাবী জাতের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উত্তরে যতই যাওয়া যাবে ততই মুকুল নাবী হবে। সে সুবাদে গোমস্তাপুর, শিবগঞ্জ, ভোলাহাটের নাবী মুকুল ছোট অবস্থাতেই বৃষ্টির আঘাতে ঝরে পড়েছে। তা ছাড়া বাগানের পরিচর্যা হয়েছে খুবই কম। কয়েক বছর ধরে আমের বেচাকেনায় ব্যাপক লস খেয়ে কৃষকদের আম নিয়ে সার্বিক পরিচর্যা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে এ বছর আম উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কম হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

এ দিকে শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সেক্রেটারি জেনারেল ইসমাইল খান শামীমও চলতি বছর আমের উৎপাদন ৫০ ভাগ হ্রাস পাবে বলে মনে করেন। তিনি জানান ৭০ ভাগ আমচাষি এবার বাগান পরিচর্যা করেননি। তিন বছর ধরে আমচাষিরা অব্যাহতভাবে লস খেয়ে একেবারে বিপর্যস্ত। গত বছর লসের পরিমাণ ছিল সব চেয়ে বেশি। ফরমালিন ভীতি থেকে ভোক্তারা ভয়ে আম খেতে চায়নি। এতেই আমের প্রকৃত বাজার হারিয়ে যায়। অথচ আমে কোনো ফরমালিন মেশানো হয় না বলে তিনি জানান।

তবে ম্যাংগো প্রোডিউসার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ ভিন্ন মত প্রকাশ করে জানিয়েছেন, আম উৎপাদনে হয়তো শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে পারে। তিনি জানান, চর ও বরেন্দ্র এলাকায় গত এক বছরে প্রায় তিন হাজার হেক্টর আমবাগান বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব এলাকার আমবাগান মূলত খিরসাপাত, বারি-৪ ও আম্রপালি জাতের। এগুলো নাবী জাতের আম। এসবে বেশি মুকুল এসেছিল এবং টিকেছেও ভালো। ফলে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনার পক্ষে মত প্রকাশ করেন তিনি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top