শ্রীলঙ্কায় হামলা : নেপথ্য নায়ক কারা?

শ্রীলঙ্কায় রোববার চালানো বোমা হামলার পেছনে স্থানীয় না আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর হাত, তা নিয়ে ধোঁয়াশা বিরাজ করছে। গতকাল সোমবার দেশটির একজন ঊর্ধ্বতন তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, সাতজন আত্মঘাতী হামলাকারী অংশ নিয়েছিলেন। দেশটির মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রাজিথা সিনারতের উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপির খবরে জানানো হয়, স্থানীয় ইসলামি সংগঠন ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত (এনটিজে) এ হামলায় জড়িত। আন্তর্জাতিক কোনো গোষ্ঠী তাদের সহায়তা করেছে কি না, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। আবার সিনারতের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স বলছে, হামলায় আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক জড়িত। স্থানীয় কোনো দল এভাবে হামলা চালাতে পারে না।

শ্রীলঙ্কার সরকারের ফরেনসিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরিয়ানন্দ ওয়েলিয়াঙ্গা বলেন, কলম্বোর বিলাসবহুল সানগ্রিন্ডলা হোটেলে দুই হামলাকারী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হন। অন্য হামলাকারীরা তিনটি গির্জা ও অন্য দু’টি হোটেল লক্ষ্য করে হামলা চালান। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর উপকণ্ঠে চতুর্থ হোটেল ও একটি বাড়িকেও হামলার নিশানা করা হয়। তবে সেসব জায়গায় কিভাবে হামলা হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। ওয়েলিয়াঙ্গা বলেন, এ ঘটনায় এখনো তদন্ত চলছে।

রোববার স্থানীয় সময় ৮টা ৪৫ মিনিটে তিনটি হোটেল ও গির্জায় চারটি বোমা হামলা হয়। পরের ২০ মিনিটে আরো দু’টি বোমা হামলা হয়। বিকেলের দিকে চতুর্থ হোটেল ও একটি বাড়িতে বোমা হামলা হয়। পুলিশের তথ্যের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা ২৯০ জনে পৌঁছেছে। তাদের মধ্যে ৩৬ জন বিদেশী বলে জানিয়েছে। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে ২৪ জনকে। আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ হামলার দায় নেয়নি। কিংসবারি হোটেলের এক কর্মী বলেন, ‘অতিথিরা তখন সকালের নাশতার জন্য এসেছিলেন। হামলার পর সেখানকার মেঝেতে কেবল রক্ত আর রক্ত।’ শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রাজিথা সিনারতেœ বলেছেন, দেশটির সরকার মনে করছে, স্থানীয় ইসলামপন্থী সংগঠন এনটিজে ভয়াবহ এই আত্মঘাতী হামলায় জড়িত।

সূত্র : রয়টার্স ও এএফপি

নিহত ৩৬ বিদেশী : হামলায় ৩৬ জন বিদেশী নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ৯ জন। রোববার রাতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ কথা জানায়। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোববার দিনের শুরুতে রাজধানী কলম্বো, নেগোম্বো ও বাত্তিকালোয়ায় বিস্ফোরণ ঘটে। কলম্বো ন্যাশনাল হাসপাতালে নিহতদের মধ্যে যাদের বিদেশী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১। এর মধ্যে তিনজন ভারতীয়, একজন পর্তুগীজ, দু’জন তুরস্কের, তিনজন ব্রিটিশ, দু’জন মার্কিনি ও দু’জন ব্রিটিশ। এ ছাড়া কলম্বো জুডিশিয়াল মেডিক্যাল অফিসারের মর্চুয়ারিতে রাখা হয়েছে ২৫টি মৃতদেহ। তাদের নাম, পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। এ ছাড়া কলম্বো ন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৯ জন বিদেশী। ওদিকে নেগোম্বো ও বাত্তিকালোয়া জেনারেল হাসপাতাল ও কলম্বো নর্থ টিচিং হাসপাতালের পরিচালকরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন, তাদের হাসপাতালগুলোতে কোনো আহত বিদেশীকে ভর্তি করা হয়নি। কাউকে সেখানে মৃতও ঘোষণা করা হয়নি।

বাসস্ট্যান্ড থেকে ৮৭টি ডেটোনেটর উদ্ধার : শ্রীলঙ্কার পুলিশ দেশটির প্রধান বাস স্টেশন থেকে ৮৭টি বোমার ডেটোনেটর উদ্ধার করেছে। সোমবার রাজধানী কলোম্বোর ওই বাসস্টেশনে অভিযান চালিয়ে এই ডেটোনেটরগুলো উদ্ধার করা হয়। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর একজন মুখপাত্র এ খবর নিশ্চিত করেছেন। রোববারের ভয়াবহ হামলার পরপরই দেশজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এ ধরনের হামলা আরো হতে পারে। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী সমগ্র দ্বীপপুঞ্জ ধরে অভিযান পরিচালনা করছে। আরো এ ধগ্রণর বোমা রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top