চলছে দেশব্যাপী প্রচণ্ড গরম। বাড়ছে ডায়রিয়া, আমাশয়ের মতো জীবাণু সংক্রমণ। রাজধানী ঢাকার আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে তাঁবু টানিয়ে ডায়রিয়ার রোগীর জন্য জায়গা ও বিছানা বাড়ানো হয়েছে। গত কয়েক দিন থেকে এই হাসপাতালে দিনে ৭০০ এর বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত আসছে। সোমবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৭২১ জন চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
রোববার রাত ১২টার আগ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে ৭৬৮ জন এসেছেন চিকিৎসা নিতে। ডায়রিয়া ছাড়াও এই গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সামনে আরো কমপক্ষে এক সপ্তাহ আবহাওয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। আগামী পাঁচ দিন তাপমাত্রা কমবে না বরং বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের কয়েকটি স্থানে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে টেকনাফে ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কেন তাপমাত্রা বাড়ছে, কেন বৃষ্টি নেই? এই প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়বিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, এ সময়ে আবহাওয়াটা এমনই থাকে। বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম। যেটুকু বাষ্প আছে তাতে প্রয়োজন মতো মেঘ হচ্ছে না। ফলে বৃষ্টিও হচ্ছে না। এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ রয়েছে কিন্তু এটা স্বাভাবিক মওসুমি লঘুচাপ। এই লঘুচাপ থেকে আবহাওয়ায় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশে আবহাওয়া নিয়ে খোঁজখবর রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাসিফিক ইএনএসও এপ্লিকেশন ক্লাইমেট সেন্টারের প্রধান বিজ্ঞানী রাশেদ চৌধুরী। তিনি জানান, বাংলাদেশের চলতি গরমের জন্য এল নিনু পরিস্থিতি কিছুটা দায়ী। বর্তমানে বাংলাদেশে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে। কোথাও কোথাও বিরাজ করছে উচ্চ তাপমাত্রা। উচ্চ তাপমাত্রা থেকে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়ে থাকে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ডায়রিয়ার রোগী বেড়েছে অনেক বেশি। তিনি জানান, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলীয় ও মহাসাগরীয় পরিববর্তনটা হতে পারে বেশ নাটকীয় ধরনের। কয়েক যুগ ধরে গবেষণায় এর কারণে খুঁজে বের করার চেষ্টা সত্ত্বেও এ বছরের এল নিনু আমাদের বিস্মিত করছে।
বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গরমের সময় একটু বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। গরমে ডায়রিয়ার জীবাণুগুলো খুব বেশি সক্রিয় হয়ে থাকে। ফলে সহজেই ডায়রিয়া হয়ে যাচ্ছে। আইসিডিডিআরবির সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. আজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ সময় বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করলে ডায়রিয়া থেকে বেঁচে থাকার সাথে সাথে হিটস্ট্রোক থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। রাস্তার খাবারগুলো না খাওয়াই উচিত। রাস্তার খাবারে ডায়রিয়ার জীবাণু থাকে। এ ছাড়া বাসি খাবারও খাওয়া যাবে না। বাসি খাবার গরম করে খাওয়া যেতে পারে। রাস্তায় বিক্রি করা শরবত পান করা যাবে না। এসব পানি বিশুদ্ধ থাকে না। তা ছাড়া খোলা জায়গায় রাখা হয় বলে এবং বেশি হাতের স্পর্শ লাগে বলে এতে জীবাণু সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের গবেষণাগারে রাস্তার চটপটি, ফুসকা, ডালপুরি, ঝালমুড়ি পরীক্ষা করে গত বছর এসব খাদ্যসামগ্রী থেকে ডায়রিয়া, কলেরা ও হেপাটাইটিসের জীবাণু পাওয়া গেছে।