বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন জমিদার বাড়ী। ময়মনসিংহ থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জামালপুর মহাসড়কের সংযোগ স্থল থেকে ১ কিলোমিটার উত্তর পূর্বদিকে মুক্তাগাছার রাজবাড়ির অবস্থান। মুক্তাগাছার তদানীন্তন জমিদার বৃটিশ রাজন্য কর্তৃক প্রথমে রাজা এবং পরে মহারাজা উপাধি পেয়েছিলেন বিধায় জমিদারের বাসভবন রাজবাড়ী হিসেবে আখ্যায়িত হতো।
জমিদারি প্রথার বিলোপ হয়েছে অনেক আগেই। এক সময়ের প্রতাপশালী সেসব জমিদারের বংশধরেরাও অনেকেই এখন আর প্রতাপ রাখেন না। তবে তাদের নির্মিত বহু মুল্যাবন স্থাপনাগুলো আজও মানুষকে মনে করিয়ে দেয় তাদের প্রভাব আর প্রতিপত্তির ইতিহাস। তেমনই এক স্থাপনা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদার বাড়ি।
সতেরশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণ করা হয় মুক্তাগাছার জমিদার বাড়ি। ১৮শ শতাব্দিতে ভূমিকম্পে বাড়িটি ভেঙ্গে পড়লে লন্ডন আর ভারত থেকে কারিগর এনে ভূমিকম্প সহিষ্ণু করে পূণ:নির্মাণ করা হয় জমিদার বাড়িটি। ১০০ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই রাজবাড়িটি প্রাচীন স্থাপনাশৈলীর অনন্য নিদর্শন।
১৯৪৭ সালের পর মুক্তাগাছার জমিদারদের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর ১৬ জন বংশধরের প্রায় সবাই চলে যান ভারতে। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে তাদের নির্মিত ১৬ টি বাড়ি। ক্রমান্বয়ে এই বাড়িগুলিতে ( রাজবাড়ি ব্যতিত) গড়ে তোলা হয় শহীদ স্মৃতি সরকারী কলেজ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প, সাব রেজিস্ট্রি অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, নবারুণ বিদ্যানিকেতনসহ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান।
জমিদারবাড়ির দেয়ালে কারুকাজ
এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিরল প্রজাতির গাছ। ময়মনসিংহ – টাঙ্গাইল সড়কের মুক্তাগাছার রসুলপুর বনে বিশাল শাল গজারি গাছ আর লাল মাটিতে আনারস বাগান পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
পর্যটকদের আরেক আকর্ষণ মুক্তাগাছার প্রসিদ্ধ মণ্ডা। আজ থেকে ২শ’ বছর আগে গোপাল পাল এই মণ্ডা তৈরি করেন। কথিত আছে স্বপ্নে এক সাধু তাকে এই মণ্ডা তৈরির কলাকৌশল শেখান। গোপাল পালের বংশধররা এই মণ্ডার ঐতিয্য ধরে রেখেছেন। মুক্তাগাছা ব্যতিত দেশের আর কেথাও এই মণ্ডা পাওয়া যায় না। দেশ বিদেশে এই মণ্ডার অনেক সুনাম রয়েছে।
মুক্তাগাছার প্রসিদ্ধ মন্ডা
সব সময়ই মুক্তাগাছার জমিদার বাড়িতে পর্যটকদের আগমন লক্ষ করার মতো। ছুটির দিনগুলোতে দেশের অনেক জায়গা থেকেই পর্যটকরা এখানে ছুটে আসেন। পরিদর্শন শেষে উপভোগ করেন ঐতিয্যবাহি মণ্ডা।
মুক্তাগাছার জমিদার বাড়িতে একটি সুড়ঙ্গপথ পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় এই সুড়ঙ্গপথেই গোপনে ময়মনসিংহের শশী লজে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। উল্লেখ্য, শশী লজের এক স্নানঘরে এই রকম একটি সুড়ঙ্গ পথ পাওয়া যায়।
বিবির ঘর ছাড়া ও বিশাল আকারের পুকুর বিষ্ণু সাগর, প্রাচীন স্থাপনা যুগল মন্দির, চাঁন খার মসজিদ, সাত ঘাটের পুকুর, জলটং, রসুলপুর বনসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্পট রয়েছে এখানে।