মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ভূমিকার বিরোধিতার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। কারণ, তার একজন ‘আপন লোক’ বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর পদে হয়েছেন অধিষ্ঠিত। এই ব্যক্তির নাম ডেভিড ম্যালপাস। ট্রাম্পের মতোই বিশ্বায়নবিরোধী মানুষটি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কৌশল হিসেবে হলেও ট্রাম্পের সাথে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অব্যাহত বিতর্কিত ভূমিকার প্রেক্ষাপটে ম্যালপাসের বিশ্বব্যাংকে নিয়োগের বিশেষভাবে সমালোচনা করা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। তার আমলে বিশ্বব্যাংক বৃহত্তরভাবে পাশ্চাত্য এবং বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর স্বার্থ সুরক্ষার কাজই বেশি করবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
ডেভিড ম্যালপাস ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন। তখন তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাংকসমেত অর্থপ্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া ‘দুর্নীতিদুষ্ট’। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনসহ যেসব দেশ তুলনামূলকভাবে সচ্ছল, তাদের অর্থ দেয়ারও তিনি বিরোধিতা করেছেন।
আসলে বিশ্বব্যাংকে আমেরিকার প্রভাব ও কর্তৃত্ব নতুন নয়। তবে ট্রাম্পের অবিরাম বিতর্কিত ভূমিকা এবং ম্যালপাসের ‘ট্রাম্পপন্থী’ পরিচয় ও বিশ্বব্যাংকের ব্যাপারে গোঁড়া মনোভাব ম্যালপাসকে নিয়ে সাম্প্রতিক সমালোচনার কারণ। এই ব্যাংকের ১৫ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে যুক্তরাষ্ট্র একাই ১৬ শতাংশ ভোটের মালিক। তার পছন্দের লোকেরাই গত ৭০ বছর ধরে বিশ্বব্যাংকে মোড়লিপনা করে এসেছেন। বিশ্বব্যাংকে যুক্তরাষ্ট্রের পর সর্বোচ্চ শেয়ার জাপানের। চীন এ দিক দিয়ে তৃতীয়।
ম্যালপাসকে আগে নিজের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে নিতে হবে। এ জন্য নিজের ইমেজ উন্নত করা আবশ্যক। কিছু বক্তব্যই তার বিরোধিতার উৎস। তিনি চীনকে অধিক ঋণ না দেয়ার পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন, ‘এমনিতেই তারা বেশ শক্তিশালী।’ তদুপরি, ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে ২০১৭ সালে বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক পরিষদের অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা বা Multilateralism অনেক এগিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ সমগ্র বিশ্বের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে বিঘ্নিত।’ এখন সুর নরম করে ফেললেও অতীতে তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ হচ্ছে অনাহূত প্রবেশকারী।’ এ ধরনের উক্তিগুলো ভুল ছিল বলে আনুষ্ঠানিকভাবে তার স্বীকার করা উচিত। অন্যথায় নিজের বক্তব্যের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে হবে বৈকি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে যত বিভেদ-বিতর্ক থাকুক না কেন, তার সরকারের ঊর্ধ্বতন ট্রেজারি কর্মকর্তা ম্যালপাসের বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব এবার সর্বসম্মতভাবে পাস হয়ে যায়। যদিও বিশ্বব্যাংকের সব সদস্য দেশের অধিকার রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার, তবুও অলিখিত বিধি অর্থাৎ রীতিমাফিক এ পদে প্রাধান্য পেয়ে থাকেন কোনো মার্কিন নাগরিক। ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সভায় ‘উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ’ মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় ম্যালপাসকে বাছাই করার কথা জানানো হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাংকের পথ চলার সূচনা। তখন থেকে এর সব প্রেসিডেন্টই আমেরিকান। এটা নিশ্চয়ই কাকতালীয় নয়। বার্তা সংস্থা জানায়, আসলে একটা অলিখিত নিয়ম রয়েছে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিক হয়ে থাকেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট আর পাশ্চাত্যের অপর অংশ মানে, ইউরোপের কেউ হয়ে থাকেন বিশ্বব্যাংকের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান। বলা বাহুল্য, এ ক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠানটির নাম সর্বাগ্রে, তা হলো আইএমএফ বা আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল।
এবার বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের প্রাক্কালে ম্যালপাসকে বিশ্বব্যাংকের শীর্ষ পদের জন্য বেছে নেয়ার কথা ঘোষণা দেয়া হলো। ৯ এপ্রিল থেকে তিনি একাধারে পাঁচ বছর বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। তার আগে এ পদে ছিলেন জিম ইয়ং কিম। ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি হঠাৎ পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে কিম যোগ দিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদের অর্ধেক পার হওয়ার আগেই তিনি বিদায় নিলেন। তখনই ট্রাম্প বিশ্বব্যাংকে নিজেদের সম্পূর্ণ আস্থাভাজন কাউকে প্রেসিডেন্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যান।
২০১৯ সালের প্রথম দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ম্যালপাসকে বিশ্বব্যাংকের জন্য মনোনীত করার সাথে সাথে সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। তার বিরোধীরা বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাংকের একটা বড় দায়িত্ব হলো দারিদ্র্য দূর করা; আর ম্যালপাসের মনোনয়ন এই মিশনের বাস্তবায়নের পথে বাধাস্বরূপ। ৬৩ বছর বয়সী ম্যালপাস মার্কিন অর্থ দফতরের আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো দেখাশোনা করতেন। তিনি বলে এসেছেন, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণদান প্রক্রিয়া অকার্যকর এবং তারা চীনের প্রতি বেশি উদার।’ অবশ্য বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট নিয়োগের ঘোষণা দেয়ার সময় ঘনিয়ে এলে তিনি সুর নরম করে ফেলেন। তখন তিনি বললেন, ‘চরম দারিদ্র্যের অবসান ঘটাতে বিশ্বব্যাংকের যে মিশন রয়েছে, এর বাস্তবায়নে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ।’ গত বছর ১৩ বিলিয়ন ডলার পুঁজি বৃদ্ধির অংশ হিসেবে যে সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে, তাতে তার সমালোচনার ‘বহু কারণ দূর হয়ে গেছে’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এ দিকে উদীয়মান বাজার অর্থনীতির দেশগুলো গত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ নেতৃত্বের ধরনকে চ্যালেঞ্জ করেছে। তাদের দাবি, আরো উন্মুক্ত পন্থায় এবং মেধার ভিত্তিতে নেতৃত্ব বাছাই করতে হবে। বিশ্বব্যাংক তাদের চাপে আগের চেয়ে দৃশ্যত ‘উন্মুক্ত’ হলেও শীর্ষপদের জন্য বাছাই করার ক্ষেত্রে ব্যাংকের বড় শরিকদারেরা এমন কাউকে সমর্থন করেনি যারা আমেরিকার বাইরের লোক।
অর্থনীতিবিদ এবং আর্থিক খাতের সাবেক কর্মকর্তাদের অনেকেই বিশ্বব্যাংকের প্রধানরূপে ডেভিড ম্যালপাস মনোনীত হওয়ার পরে এ বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। এমনকি খোদ ট্রাম্পের নিজের দল, রিপাবলিকান পার্টির একজন বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের জন্য ম্যালপাসকে বাছাই করার বিষয়টি বিপর্যয় ডেকে আনবে। এটা একটা বিষাক্ত বাছাই।’ এত কিছু সত্ত্বেও শেষাবধি দেখা গেছে, এই ডেভিড ম্যালপাসই বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর পদে পছন্দের একমাত্র ব্যক্তি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ব্যাংকের আর কোনো সদস্যদেশ কাউকে এ জন্য মনোনয়ন দেয়নি। অপর দিকে, কৌশলী ম্যালপাস বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের বাছাই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চীন এবং উন্নয়নশীল বহু দেশের নেতা ও কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছেন। ম্যালপাস এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমার প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেখে মুগ্ধ হয়েছি।’ বিশ্বব্যাংকের লক্ষ্য পূরণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার জন্য তিনি ‘খুব আগ্রহী’ বলে দাবি করেন।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে কমিউনিস্ট চীনের তীব্র বিরোধিতা করলে কী হবে, ম্যালপাস এখন চীনের প্রশংসা করতেও দ্বিধা করছেন না। ম্যালপাস এক দিকে জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংকের তহবিল বাড়ানোর জন্য আলোচনার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং এ সংক্রান্ত চুক্তিতে বলা হয়েছে, চীনসহ মধ্য আয়ের দেশগুলোকে ঋণদানের পরিমাণ যাতে অনেক কমিয়ে দেয়া হয়। অন্য দিকে, একই সাথে তিনি বলেন, চীন দেশটি প্রায় ১০০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করেছে, যা অন্যদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। তবে চীনের বহুলালোচিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের বিরুদ্ধে এ মর্মে সমালোচনা রয়েছে যে, ‘এ ক্ষেত্রে ঋণপ্রদানে অস্বচ্ছতার দরুন উন্নয়নশীল দেশগুলো উদ্বিগ্ন। কারণ, এতে তাদের ঋণ অনেক বেড়ে গেছে।’
এ দিকে, বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘প্রকল্পের মান উন্নত হতে হবে। ঋণপ্রদানের বেলায় থাকা চাই স্বচ্ছতা। দুর্নীতি থেকে সুরক্ষাসহ ক্রয়সংক্রান্ত নিয়মকানুন হতে হবে স্পষ্ট। তাহলে ভালো উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে।’
ম্যালপাসের প্রথম ‘সাফল্য’ হলো, ব্যাপক বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি বিশ্বব্যাংক প্রধানের পদটি বাগিয়ে নিতে পেরেছেন। দেখা যাক, বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্যমোচন মিশনের বাস্তবায়নে যাবতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিনি ওয়াদামাফিক কতটা সফল হন। মার্কিন অর্থ বিভাগের সাবেক কর্মকর্তারা- ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান নির্বেশেষে- ম্যালপাসের যোগ্যতার প্রশ্ন তুলে তার তীব্র সমালোচনা করতে ছাড়েননি। তারা স্মরণ করিয়ে দেন, অধুনালুপ্ত বিনিয়োগ ব্যাংক ‘বিয়ার স্টিয়ার্নস’-এ কাজ করার সময় এই ম্যালপাস ২০০৮ সালে বিশ্বের আর্থিক মন্দার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হন এবং এই সঙ্কটের পরবর্তীকালে ফেডারেল রিজার্ভ (মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক) কর্তৃক গৃহীত পলিসির অযৌক্তিক বিরোধিতা করেছিলেন।
অপর দিকে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন নুচিন ম্যালপাসের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘তিনি বিশ্বব্যাংকের ব্যতিক্রমী নেতৃত্ব দেবেন। এই ভূমিকা পালনকালে তার সাথে কাজ করার জন্য অপেক্ষা করছি।’ উল্লেখ করা দরকারÑ ম্যালপাস মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে ল্যাটিন আমেরিকা সংক্রান্ত একটি সিনিয়র পদেও কাজ করেছেন।
শুধু নুচিন নন, খোদ ট্রাম্পতনয়া এবং তার উপদেষ্টা ইভাঙ্কা বিশ্বব্যাংকের প্রধান হওয়ায় ম্যালপাসকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘ইনি দারিদ্র্য হ্রাস করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’ নুচিনের ভাষায়, ‘ম্যালপাসই বিশ্বব্যাংকের জন্য আদর্শ ব্যক্তি।’ আর ইভাঙ্কার কথা হলো, ‘ম্যালপাস একজন অসাধারণ নেতা।’ কথায় বলে ‘রতনে রতন চিনে।’ ট্রাম্প গং নিশ্চয়ই অনেক হিসাব করেই তাদের মিশন বাস্তবায়নের জন্য ম্যালপাসের মতো বশংবদ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে বিশ্বব্যাংকে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
ধনিক শ্রেণীর প্রতিনিধি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘পেয়ারের আদমি’ ডেভিড ম্যালপাস বিশ্বব্যাংকের দায়িত্ব পেয়ে পয়লা কর্মদিবসেই দারিদ্র্য তাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে এএফপির ভাষ্যে অভিমত দেয়া হয়েছে, ট্রাম্পের পছন্দনীয় ব্যক্তি হিসেবে তাকে নিয়ে বিতর্ক যাতে আর না বাড়ে, এ জন্য ম্যালপাস এখন তার বক্তব্য ও ভূমিকা বদলেছে বলে দেখাতে চান। অতীতে ম্যালপাস বিশ্বব্যাংকের সমালোচনাও করেছেন। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো আর এই প্রতিষ্ঠানের স্টাফদের সমর্থন তার প্রতি আছে, এ বিষয়টা তিনি তুলে ধরতে চান।
বিশ্বব্যাংক প্রধান হিসেবে প্রথম দিন অফিস করতে এসে কয়েকজন সাংবাদিককে ডেভিড ম্যালপাস বলেছেন, বিশ্বজনীন দারিদ্র্যই বিশ্বব্যাংকের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি ইস্যু। তিনি সমৃদ্ধিকে ভাগাভাগি করে নেয়া এবং চরম দারিদ্র্য নির্মূল করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। তার ভাষায়, ‘পৃথিবীতে আজো ৭০০ মিলিয়ন মানুষ চরম দরিদ্র এবং এই সংখ্যাটা অনেক বেশি।’
ম্যালপাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনের লোক হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি জলবায়ু ইস্যুতে ভিন্ন সুরে কথা বলছেন। ট্রাম্প জলবায়ু ইস্যুকে ‘অতিরঞ্জিত’ মনে করে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘প্যারিস চুক্তি’ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে এনেছেন। অপর দিকে, ম্যালপাস স্বীকার করলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এমন একটি গুরুতর সমস্যা যে ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের করণীয় আছে। কারণ, এর ফলে উন্নয়নশীল দেশের দারিদ্র্য বাড়তে পারে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার হাত বাড়িয়েছেন বিশ্বব্যাংকের দিকে। এতে সংস্থাটিতে তার প্রভাব ও আধিপত্য যেমন বাড়তে পারে, তেমনি বাড়বে তাকে নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক। অবশ্য তার বিরোধিতার যত যুক্তি ও ভিত্তিই থাকুক না কেন, তিনি এসব কিছুকে ‘উধসহ ঈধৎব’ মনোভাব দেখিয়ে যেতে চান। অর্থাৎ, শত নিন্দা-ধিক্কারেরও তিনি তোয়াক্কা করেননি এবং করবেন না। এই মানসিকতা থাকায় তিনি ডেভিড ম্যালপাসের মতো দীর্ঘদিনের পাঁড় রিপাবলিকানকে বিশ্বব্যাংকের ওপর ছড়ি ঘোরাতে বসিয়েছেন। বিবিসির খবর, ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণাকালে এ ব্যক্তিই ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাহীন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঊর্ধ্বতন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা।
অনেকে বলছেন, ম্যালপাসের ব্যাপারে সর্বাধিক বিস্ময়কর হলো, বিশ্বব্যাংকের প্রধান নিজেই বিশ্বায়নের বিরোধী। তিনি আগে থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের একজন কঠোর সমালোচক। তাই বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা তার আমলে বিস্তৃত নয়, সঙ্কুচিত হয়ে পড়তে পারে। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোতে বিশ্বব্যাংকের ঋণের পরিমাণ হ্রাস পাওয়াও অসম্ভব নয়।
তবে বাংলাদেশে গুরুতর প্রভাব না পড়ার বিষয়ে কেউ কেউ আশাবাদী। যেমন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরের মতে, ‘ম্যালপাস বিশ্বব্যাংক প্রধান হওয়ার ফলে আমাদের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ, বিশ্বব্যাংক আমাদের ঋণ প্রদান করে যেতে হবে। তা ছাড়া, এ প্রতিষ্ঠানের পলিসি রাতারাতি পাল্টানো যায় না। এ জন্য সময় ও সমর্থন দুটোই দরকার। অবশ্য চীন ও ভারত বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ পেতে পারে কিছুটা কম। তবে চীন আর এই ঋণের ওপর নির্ভর করে না। বাংলাদেশ ঋণ পেলে এর সদ্ব্যবহার করা প্রয়োজন।’
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সম্ভবত ডোনাল্ড ট্রাম্প সর্বাধিক বিতর্কিত। যুক্তরাষ্ট্রের গত সোয়া ২০০ বছরের ইতিহাসে এটা একটা অবাঞ্ছিত ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। সেই ট্রাম্পের গোঁড়া সমর্থক হিসেবে পরিচিত একজন হচ্ছেন ডেভিড ম্যালপাস। অতীতে ভিয়েতনাম যুদ্ধকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জনসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট ম্যাকনামারা বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তবে ম্যালপাস একই পদে মনোনীত হওয়ার পর আরো বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভকে ‘রাজনীতির শিকার’ বানিয়েছেন বলে সমালোচনা হচ্ছে। আপনলোক ডেভিড ম্যালপাসকে বিশ্বব্যাংকের প্রধান বানিয়ে তিনি এখন এই প্রতিষ্ঠানকে কুক্ষিগত করতে হাত কতটা বাড়াবেন, সেটাই দেখার বিষয়। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট কাজকর্ম তিনি নিজ হাতে তুলে নিচ্ছেন। বিশ্বব্যাংকের সব কিছু ওভাবে নিজে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তার ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন হিসেবে নতুন প্রেসিডেন্ট ম্যালপাস সে কাজ আঞ্জাম দেবেন বলে অনেকের আশঙ্কা।