বিশ্বকাপ দলের বড় চমক রাহী

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ২০১৬ সিজনে পেস বোলারদের মধ্যে এক সম্ভাবনাময়ী ক্রিকেটার ছিলেন আবু জায়েদ রাহী। দুর্দান্ত বোলিং, লাইন-লেন্থ, গতি আর সুইংয়ে নজর কেড়েছেন সবার। তখনই ধারণা করা হয়েছিল বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে রাহী নতুন কোনো কান্ডারির নাম হবে।

পুরো নাম আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী। ১৯৯৩ সালের ২ আগস্ট সিলেট জেলায় জন্ম তার। শৈশবকাল এবং শিক্ষাজীবন কাটে সিলেটেই। সিলেটের দ্য এইডেড উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক লেখাপড়া শেষ করে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন মদন মোহন কলেজ থেকে। বর্তমানে সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) পড়াশোনারত।

বয়সভিত্তিক পর্যায়ে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ এবং অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে। ২০১২ সালে যুব দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন। খেলেছেন বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে। অংশগ্রহণ করেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের সব আসরে। সেখানেই ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরী করেছেন।

শুরুর দিকে ঘরোয়া ক্রিকেটে তেমন নজরকাড়া পারফরম্যান্স করতে পারেননি তিনি। সুযোগ পাননি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্রথম দুই আসরেও। কিন্তু বিপিএল ২০১৫ সিজনে রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে মোটামুটি ভালো ফর্ম করেন এই বোলার। বিপিএল ২০১৬ সিজনে ঢাকা ডায়নামাইটসের স্কোয়াডে থাকলেও একাদশে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। হঠাৎ ডায়নামাইটসের পেসার মোহাম্মদ শহীদের ইনজুরিতে সুযোগ মিলে রাহীর। সেই আসরে ৮ ম্যাচ বোলিং করে ৫.২৫ ইকোনোমি রেট দিয়ে ৯ উইকেট শিকার করে আলোচনায় আসেন রাহী। তার সেরা বোলিং ফিগার ছিল ২০ রানে ৩ উইকেট।

এরপর আলো ছড়ান বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল)। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগে (ডিপিএল) সব ম্যাচ না খেললেও ৮ ম্যাচ খেলে ৫.০১ ইকোনোমি রেটে ১১ উইকেট নিয়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন এই বোলার।

২০১৬-১৭ সেশনে জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএল) নজরকাড়া বোলিং করেন। সিলেট বিভাগের হয়ে ৬ ম্যাচে ১১ ইনিংসে বোলিং করে ৩.৩২ ইকোনোমি রেটে ২৯ উইকেট নিয়ে শীর্ষ উইকেট শিকারি হন। ৫ উইকেট শিকার করেছেন চার বার। সেরা বোলিং ফিগার ছিল ১২৫ রানে ৯ উইকেট।

বিপিএল ২০১৭ সিজনে খুলনা টাইটান্সের হয়ে আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হন রাহী। ১২ ম্যাচ খেলে ৮.৯৫ ইকোনোমি রেটে ১৮ উইকেট শিকার করেন এই বোলার। বিপিএল ২০১৮-১৯ আসরে চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে ১৩ ম্যাচে ১৮ উইকেট শিকার করে আসরের যৌথভাবে ৫ম সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হন আবু জায়েদ রাহী।

বিপিএল থেকেই অনেক বেশি নির্বাচকদের নজর কাড়েন তিনি। বোলিং লেন্থের ধারাবাহিকতা, রিভার্স সুইং এবং বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংই রাহীর শক্তি। দুর্বলতা হলো বলের গতি কিছুটা কম লক্ষ্য করা যায়। ইংলিশ কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে হলে রাহীকে বাউন্সিং বলে আরো শাণিত হতে হবে। এজন্য আয়ারল্যান্ড সফরটা তাকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে।

২৪ বছর বয়সী আবু জায়েদের এখন পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলা হয়নি। বাংলাদেশ দলের হয় ৫ টেস্টে বোলিংয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পেয়েছে ১১ উইকেট। তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে নিয়েছেন চার উইকেট।

২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দলে পাঁচজন পেস বোলারের কথা চিন্তা করেন নির্বাচকমন্ডলী। ইশারা-ইঙ্গিতে চারজন বোলার ঠিক করা থাকলেও, পঞ্চম বোলার নিয়ে দ্বিধায় ছিল বিসিবি। তাসকিন আহমেদ-শফিউল ইসলামের নাম উঠে এলেও তাদেরকে ম্লান করেছে রাহীর পারফরম্যান্স। অবশেষে, নির্বাচকদের নজর কেড়ে জায়গা পেয়েছেন স্বপ্নের বিশ্বকাপ দলে।

মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বকাপ দলের সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান, নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন এবং মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top