পবিত্র কোরআন এবং আন্তর্জাতিক কনভেনশনের আলোকে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তান হেফাজত, দেতালাকে সালিসি কাউন্সিলের ভূমিকা নিশ্চিত করতে নীতিমালা কেন নয় : হাইকোর্টরপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ রুল জারি করেন।
রুলে পবিত্র কোরান এবং আন্তর্জাতিক কনভেনশনের আলোকে বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তান হেফাজত, দেনমোহর ইত্যাদি বিষয়ে নিশ্চিতকরণে এ সংক্রান্ত সালিসি কাউন্সিলের ভূমিকা নিশ্চিত করতে কেন নীতিমালা করার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম।
এছাড়া পবিত্র কোরআন ও আইন অনুযায়ী স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ, ভরণ পোষণ, অন্যান্য খরচাদি নিষ্পত্তি করার বিষয়ে সালিসি কাউন্সিল কার্যকরী করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগেরে সচিব (ড্রাফটিং),মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, এলজিআরডি সচিব ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ফাওজিয়া করিম ফিরোজ জানান, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী তালাক আবেদনের ৯০ দিনের মধ্যে কোনো পক্ষ আপসের বা তালাক প্রত্যাহারের আবেদন না করলে তালাক কার্যকর হয়ে যায়। তালাক আবেদনের পর সালিসি কাউন্সিল মধ্যস্থতার জন্য ৯০ দিনে তিনবার উভয় পক্ষে নোটিশ দিয়ে ডাকবেন। কিন্তু কাউন্সিলের এ ডাকে কোনপক্ষ যদি না আসেন তাহলেও তালাক কার্যকর হয়।
তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে এটি কার্যকর হলে তো সব কিছু শেষ হয়ে যায় না। কিন্তু এর সঙ্গে দেনমোহর, ভরণ পোষণ, সন্তান থাকলে তার জিম্মা নেওয়ার বিষয় থাকে। এ কারণে তালাক হয়ে যাওয়ার পরও এ বিষয়গুলো নিয়ে মামলা হয়। যা নিষ্পত্তিতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই আমরা বলেছি পবিত্র কোরআনের স্পিরিট ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী সালিশি পরিষদ কার্যকর করা এবং এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন করার নির্দেশনায় রুল জারি করতে। আদালত রুল জারি করেছেন।
‘ঢাকায় ঘণ্টায় এক তালাক’ একটি জাতীয় দৈনিকে ২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে সেক্রোটারী সীমা জহুর ও আইনজীবী কাজী মারুফুল আলম এ রিট করেন।
পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঢাকা শহরে তালাকের আবেদন বাড়ছে। গড়ে প্রতি ঘণ্টায় একটি করে তালাকের আবেদন করা হচ্ছে। গত ছয় বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। তালাকের আবেদন সবচেয়ে বেশি বেড়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায়-প্রায় ৭৫ শতাংশ। দক্ষিণ সিটিতে বেড়েছে ১৬ শতাংশ। দুই সিটিতে আপস হচ্ছে গড়ে ৫ শতাংশের কম।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত সাত বছরে তালাকের প্রবণতা ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। শিক্ষিত স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে তালাক বেশি হচ্ছে।