ছাত্রদলে নতুন নেতৃত্ব : যেভাবে হতে পারে

আগামী বছরের ১ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্ব তরুণদের হাতে তুলে দিতে বদ্ধপরিকর বিএনপির হাইকমান্ড। তার আগে বর্তমান কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে একটি স্বল্প মেয়াদি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। যেগুলোর মেয়াদ হবে আগামী বছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কেননা কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমেই ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি নির্বাচিত করার ব্যাপারে অধিকাংশের মত। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এ ক্ষেত্রে সহমত পোষণ করেছেন। বর্তমান কমিটির শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে বাদ দিয়ে ভোটগ্রহণ হতে পারে। যদিও ভোটগ্রহণের পদ্ধতি বা অন্যান্য কিছু প্রক্রিয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি এ লক্ষ্যে গঠিত ‘সার্চ কমিটি’। সুতরাং ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা নিয়ে এক ধরনের জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর পর ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। বিশেষ করে গত ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে আশানুরূপ ভোট না পাওয়ায় ছাত্রদলের করুণ পরিণতি দলটির হাইকমান্ডের নজরে আসে। এর পরই ছাত্রদলকে নতুনভাবে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতৃত্বের বয়স নির্ধারণ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। কেউ বলছেন বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়রদের সমন্বয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে। আবার একটি পক্ষ চাইছে একেবারে জুনিয়রদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে। এমন খবরে ছাত্রদলের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা যে যার মতো করে বিএনপির সিনিয়র ও ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন।
সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের লক্ষ্যে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। যাদেরকে অনেকেই ‘সার্চ কমিটি’ বলে অভিহিত করছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সংগঠনের সাবেক শীর্ষ নেতারা ছাত্রদলের বর্তমান নেতাদের সাথে পর্যায়ক্রমে একাধিক মতবিনিময় সভা করেছেন। যদিও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে তারা এখনো পৌঁছতে পারেননি। তবে চারদিন আগে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের ব্যাপারে বেশির ভাগ নেতা একটি স্বল্প মেয়াদি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পক্ষে মত দেন। যে কমিটি প্রকৃত ছাত্রদের হাতে ছাত্রদলের দায়িত্ব তুলে দিবে। অর্থাৎ আগামী বছরের ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে। এই সময়ে আহ্বায়ক কমিটি দায়িত্ব পালন করবে।
জানা গেছে, আহ্বায়ক কমিটির আকার হবে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট। এই কমিটির প্রথম ১০ জন নেতা কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর ঘোষিত ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির আকার ৭৩৪ সদস্যবিশিষ্ট। ভোটগ্রহণ হলে জেলা সমমানের শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা ভোটাধিকার পাওয়ার কথা। সে মোতাবেক ছাত্রদলের জেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর অর্থাৎ জেলা সমমানের শাখা হচ্ছে ১১৮টি। এসব শাখা বা ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোট কাউন্সিলর ২৩৬ জন। এরা ভোটাধিকার পাবেন। তবে নির্বাহী কমিটির মধ্যে প্রায় আড়াই শতাধিক নেতাকে (সদস্য পর্যায়ের) তেমন চেনে না। এমনকি তারা দলীয় কর্মকাণ্ডেও নিষ্ক্রিয়। ফলে তাদেরকে ভোটাধিকার না দেয়ার জন্য ছাত্রদলের একটি বিরাট পক্ষ মত দেন। তাদের মতেÑ ঢালাওভাবে সবাইকে ভোটাধিকার না দিয়ে জেলা সমমানের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিংবা কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক পর্যন্ত নেতাদের ভোটাধিকার দিলেই আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জটিলতা নিরসন হবে।

কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে অন্তত ৭ শীর্ষ নেতার সাথে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। এসব নেতা জানান, তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে একাধিকবার আলোচনা পর্যালোচনা করেছেন। বেশির ভাগের মত হলো- একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পক্ষে। এই কমিটির কাজ হবে আগামী বছরের ১ জানুয়ারির আগেই কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নির্বাচিত তরুণ নেতাদের কাছে দায়িত্ব বুঝে দিয়ে সম্মানজনকভাবে বিদায় নেয়া। তবে কোন প্রক্রিয়ায় আহ্বায়ক কমিটি হবে এ নিয়ে তারা এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা একটি ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন বলে মন্তব্য তাদের।

সার্চ কমিটির রুদ্ধদ্বার বৈঠক : এদিকে ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব ঠিক করতে গত বৃহস্পতিবারও রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত বৈঠক হয়। বৈঠকে সাবেক নেতাদের মধ্যে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন বলে সূত্র জানায়।

বৈঠকের বিষয়ে একজন নেতা জানান, ছাত্রদলের পরবর্তী নেতৃত্বে কারা আসবেন সেটা বাছাই প্রক্রিয়া কোন পদ্ধতিতে হবে, কিভাবে করলে ভালো হবে আমরা সেটা বের করার চেষ্টা করছি। আমরা ছাত্রদলকে সহযোগিতা করতে চাই। কাউন্সিলের মধ্য দিয়েই নতুন কমিটি গঠন করা হবে। তবে সম্মেলন কখন বা কমিটি গঠন, এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। নেতৃত্বে কারা আসবেন এ নিয়ে কথা হয়নি। তারাই নেতৃত্ব ঠিক করবে। সে দিনের বৈঠক মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। পয়লা বৈশাখের পর আবার বৈঠকে বসবেন তারা।

একগুচ্ছ দাবি : জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ছাত্রদলের অপেক্ষাকৃত নিচু সারির নেতাদের মধ্যে সমন্বিতভাবে কয়েক দফা দাবি সার্চ কমিটির কাছে তুলে ধরা হয়। তারা এসব দাবি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পৌঁছানোর দাবি জানিয়ে কমিটি গঠনে সমস্যা সমাধানে একটি স্থায়ী সমাধান চেয়েছেন। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সর্বসম্মতিক্রমে তরুণ ছাত্রনেতাদের দিয়ে কেন্দ্রীয় ও সব ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে হবে। ছাত্রদলের কমিটি গঠনে বিতর্ক এড়াতে একটি সুস্থ-সুন্দর প্রক্রিয়া আগাম প্রকাশ করে স্থায়ী ও কার্যকরী সমাধান করতে হবে। কেন্দ্রীয় ও সব ইউনিটের কমিটির সুস্পষ্ট মেয়াদ নির্ধারণ করত মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্তির ঘোষণা চাই। সর্বোপরি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দিতে হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top