নুসরাতের খুনিদের বাঁচাতে অপতৎপরতা চলছে : রিজভী

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিএনপি। সেইসাথে এই হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে কতিপয় খুনিদের ধরা হলেও আসল খুনিদের ধরা হবে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বলে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

খুনিদের বাঁচাতে অপতৎপরতা চলছে মন্তব্য করে শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত তনু ও সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনির হত্যার মতোই কোনো অন্ধকারে অতলে তলিয়ে যাবে কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। শুধু আমরা নই, এই আশঙ্কা করেছেন স্বয়ং মহামান্য হাইকোর্টও। খুনিদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও স্থানীয় ছাত্রলীগের সভাপতি শামীমসহ জড়িত অনেকেই এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ধরবে কিভাবে? সেখানে পুলিশই সেই অপকর্মে সহযোগিতা করে।

রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে (পিজি) ভর্র্তি করলেও সরকার নিয়ন্ত্রিত ওই হাসাপাতালে তার প্রয়োজন মতো চিকিৎসা হচ্ছে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, অষ্টিয়-আর্থারাইটিসের ব্যথা এখন প্রচ- আকার ধারণ করেছে।

বিএসএমএমইউতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতিও নেই। বরং বেগম জিয়াকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে মিথ্যাচার করছেন, যা পীড়াদায়ক। দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়া সত্বেও চিকিৎসা নিয়ে দেশবাসীর কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরা হয়নি। অথচ সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলছেন। খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে ও সুচিকিৎসায় বাধা দিচ্ছে সরকার। মূল কারণ হলো- তাকে কৌশলে দুনিয়া থেকে সরিয়ে আবারো পুরোপুরি বাকশালের নামে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নি:শর্ত মুক্তি দিতে আহ্বান জানাই।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান, কাজী আবুল বাশার, ইউনুস মৃধা, গোলাম মোর্তুজা তুলা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রিজভী বলেন, মাদরাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করতে গিয়ে ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের হয়রানির শিকার হয়েছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। ওসি তার নিজের কক্ষে ঘটনা জানার নাম করে আরেক দফা হয়রানি করেছিলেন মেয়েটিকে। এই সময় অঝোরে কাঁদতে থাকা মেয়েটির (নুসরাত) ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়েছিলো। তখন ওসির কক্ষে কোনো নারী, আইনজীবী বা নারী পুলিশ সদস্য ছিলেন না। এই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। কর্তব্য পালনে অবহেলার অভিযোগে ৯ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। সরকার ওসিকে প্রত্যাহার করেই দায় সেরেছে।

এখনো তার বিরুদ্ধে আইনগত বা ফৌজদারি আইনে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। মেয়েটি থানায় অভিযোগ দায়েরের পর যদি পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিতে তাহলে তাকে পুড়িয়ে মারতে পারতো না। আমি এই হত্যাকান্ডের জড়িত দুষ্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। থানায় পুলিশের ভিডিও ধারণ ‘কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য’ নয় দাবি করে তিনি বলেন, যৌন হয়রানির অভিযোগ করার সময় ওসির ভিডিও ধারণ করার ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারপর সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়াও আইনসিদ্ধ নয়।

রিজভী বলেন, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাতের খুনিদের বাঁচাতে নানাভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। যে খবরগুলো ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, আগুন সন্ত্রাসের ধারাবাহিকতায় এগুলো হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আপনাকে বলতে চাই- এই হত্যা মামলার আসামী ও তাদের দোসরদের পক্ষে একটি গ্রুপ মাঠে নেমেছে? এই গ্রুপটি কারা? আপনি নিজে সব জানেন। সবসময় কাজ হচ্ছে- উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানো। এটা সব সময় করে এসছেন। ফেনীতে এমনিতেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা থাকতেই পারে না, ঢাকা বা অন্যত্র অবস্থান করছেন। কিন্তু জনদৃষ্টিকে বিভ্রান্ত করতে, মানুষের চোখকে অন্যদিকে ফেরানোর জন্য প্রশাসনকে ব্যবহার করে চেষ্টা করছে- কিন্তু সত্যকে আপনি আড়াল করতে পারেননি।

তিনি বলেন, সোনাগাজীর সেই মাদরাসা শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন শামীম, যুবলীগ নেতা নুর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, আব্দুল কাদের ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা, সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মকসুদুল হক ও প্রভাষক আবছার উদ্দিনের পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করেছে ওই গ্রুপটি। ঘটনায় জড়িত সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী। এর কোনো উত্তর আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? আপনি তো মুখস্ত কবিতার মতো বলে যান অনর্গল মিথ্যা কথা।

সারাদেশে নারী নির্যাতন বেড়ে গেছে দাবি করে রিজভী বলেন, নারী ও শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন থামছেই না।

শুক্রবারও বিভিন্ন স্থানে তিন স্কুলছাত্রীসহ পাঁচজনকে ধর্ষণ ও গণর্ধষণের খবরপাওয়া গেছে। গোপালগঞ্জে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করতে হাসপাতাল থেকে এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়েছে। পাবনার চাটমোহরে এক শিক্ষার্থীকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, বরগুনার পাথরঘাটায় মোবাইলে প্রেমের ফাঁদ পেতে এক স্কুলছাত্রীকে দল বেঁধে এবং নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে ২ সন্তানের জননী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

২৯ ডিসেম্বর রাতের ভোটে ক্ষমতাসীন হওয়া বাকশালী সরকারের আমলে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন মহামারী আকার ধারণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙ্গে পড়েছে। ক্ষমতাসীনদের এই নেকড়ে আক্রমণের অভিঘাতে নির্বিচার লুন্ঠন ও ধ্বংসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জনগণ। ইতিহাসে এই ধরণের সময়কালকেই বলা হয়েছে মাৎসন্যায়। অর্থাৎ বড় বড় মাছ ছোট ছোট মাছদের গিলে খায়।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top