প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত ছবি ‘ফাঁস’ করাই কি কাল হলো অ্যাসাঞ্জের?

বহুল আলোচিত ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল করে তাকে লন্ডন পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে ইকুয়েডর। ৭ বছর আগে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। এতদিন গ্রেফতার এড়াতে তিনি সেখানেই ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ কী হলো যে, যাতে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হলো?

সম্পর্কের টানাপড়েনটা চলছিল অনেক দিন ধরেই। বৃহস্পতিবারই তার ‘মাথার উপর’ থেকে আশীর্বাদের হাত তুলে নেয় ইকুয়েডর। আর তার পরই উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ। গত সাত বছর ধরে ইকুয়েডরের রাজনৈতিক পুনর্বাসনে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। আশ্রয় পেয়েছিলেন লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে।

বুধবার দূতাবাসে ঢুকে তাকে গ্রেফতার করে লন্ডন পুলিশ। দীর্ঘ সাত বছর দূতাবাসে স্বেচ্ছাবন্দী থাকার পর গ্রেফতার হলেন তিনি। উইকিলিসক আলোচনায় আসর পর সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা হয়। ওই মামলায় গ্রেফতার ও যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো ঠেকাতে তিনি লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে গ্রেফতারই হতে হলো। অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত অ্যাসাঞ্জ পেশায় একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন মার্কিন সরকারের সাথেও।

আমেরিকার লাখ লাখ গোপন ও স্পর্শকাতর নথি উইকিলিকসে ফাঁস করে দিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। তখন থেকেই ইকুয়েডরের প্রাক্তন সরকার প্রেসিডেন্ট রাফাল করিয়ার চোখে ‘হিরো’ হয়ে ওঠেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা। তার সময়েই রাজনৈতিক পুনর্বাসন দেওয়া হয় অ্যাসাঞ্জকে।

কিন্তু ২০১৭ সালে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো যখন ইকুয়েডরের ক্ষমতায় আসেন সে সময় থেকেই বর্তমান সরকারের সাথে নানা কারণে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে অ্যাসাঞ্জের। অনলাইনে রাজনৈতিক মন্তব্য না করতে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয় অ্যাসাঞ্জকে। তার বিরুদ্ধে বেনামে ওয়েবসাইট চালানোর অভিযোগ তুলেছে মোরেনো সরকার। শুধু তাই নয়, অভিযোগ, ওই ওয়েবসাইটে প্রেসিডেন্ট মোরেনোর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় নিয়েও নানা বিষয় প্রকাশ করা হয়। ওয়েবসাইটে আরও দাবি করা হয়, মোরেনো যখন জাতিসঙ্ঘে প্রতিনিধি ছিলেন সে সময় তার ভাই বেশ কয়েকটি সংস্থা খোলেন। তার পরিবার ইউরোপে বিলাসবহুল জীবনযাপন কাটিয়েছেন।

‘আইএনএ পেপার্স’ নামে প্রকাশিত সেই নথিতে প্রেসিডেন্ট মোরেনো ও তার পরিবারের ব্যক্তিগত ছবিও ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই তথ্য সামনে আসার পর মোরেনো প্রশ্ন তুলেছিলেন, তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও ছবি হ্যাক করার কে অধিকার দিয়েছে অ্যাসাঞ্জকে? যদিও উইকিলিকস-এর পক্ষ থেকে টুইট করে দাবি করা হয়, এই তথ্য ফাঁসে কোনও ভাবেই জড়িত নন অ্যাসাঞ্জ। তার বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেও দাবি করে উইকিলিকস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরপর থেকেই অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সন্দেহটা দৃঢ় হতে শুরু করে মোরেনোর। ফলে তাদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে। শুধু তথ্য ফাঁসই নয়, দূতাবাসে থাকাকালীন দুর্ব্যবহারেও অভিযোগ উঠেছে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে। ইকুয়েডরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ভ্যালেন্সিয়ার অভিযোগ, দূতাবাসে থাকাকালীন অ্যাসাঞ্জ যে ফোনটা ব্যবহার করতেন সেটার কোনও রেজিস্ট্রেশন ছিল না। দূতাবাসের পরিবেশও খারাপ করছিলেন বলেও অভিযোগ ওঠে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে।

যদিও এই বিষয়গুলির জন্যই অ্যাসাঞ্জের পুনর্বাসন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ইকুয়েডর সরকার দাবি করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোরেনোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের সন্দেহে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইকুয়েডর সরকার। সূত্র: আনন্দবাজার

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top