খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে তামাশার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসুন : তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে তামাশার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে বিএনপির নেতাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
আওয়ামী লীগের অন্যতম মুখপাত্র ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সরকার নয়, বিএনপির নেতারাই বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে তামাশা করছে। তার শরীরের তাপমাত্রা কতটুকু বাড়ল বা কমল তা নিয়ে তারা দিনে দু’বার সংবাদ সম্মেলন করেন।’

তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকালে বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে একবার সংবাদ সম্মেলন করেন। আবার বিকেলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দলটির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সংবাদ সম্মেলন করেন।

ড. হাছান বলেন, বিএনপির রাজনীতি বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার মধ্যে আটকে গেছে। তারাই তার চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে রাজনীতি করে তামাশার নাটক করছে।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়ার হাঁটু ও কোমরের ব্যথা অনেক আগে থেকেই ছিল। এ ধরণের ব্যথা নিয়েই তিনি দু’বার দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির মতো একটি বড় দলের চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি বলেন, তাই সরকার বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে নাটক করছে না, বরং বিএনপির নেতারাই তার চিকিৎসা নিয়ে দিনে দু’বার সংবাদ সম্মেলন করে তামাশার নাটক করছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বিএনপির নেতাদের বক্তব্যের জবাবে বলেন, প্যারোলে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় সে বিষয়ে বিএনপির নেতাদের আগে জানা উচিত। প্যারোলের আইন কানুন ও বিধি-বিধান সম্পর্কে তাদের পড়াশুনা করা দরকার।

তিনি বলেন, সরকার জোর করে কাউকে প্যারোলে মুক্তি দিতে পারে না। যিনি প্যারোলে মুক্তি চান তাকে আবেদন করতে হয়।
আন্দোলন করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনা হবে বিএনপির নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে ড. হাছান বলেন, তাদের (বিএনপি) আন্দোলনের তর্জন-গর্জন হচ্ছে খাঁচায় আবদ্ধ রোগাক্রান্ত সিংহের গর্জনের মতো।
তিনি বলেন, এ ধরনের গর্জনে দর্শকরা যেমন আনন্দ পায় তেমনি বিএনপির আন্দোলনের তর্জন-গর্জনেও দেশের মানুষ বিনোদন পায়।

বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণে সহযোগী সংগঠনের সংগে বিএনপির বৈঠকের বিষয়ে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, সরকার দশ বছর ধরে বিএনপির আন্দোলনের হুমকির মধ্যে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তৃতীয়বারের মত সরকার গঠন করেছেন।
এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, বিএনপির আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ করতে আরো কত বছর লাগে সেটাই দেখার বিষয়। আর তাদের আন্দোলনের তর্জন-গর্জন দিয়ে কোন লাভ হবে না।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। পাকিস্তানের দোসর ও পরিস্থিতির কারণে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়া একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযুদ্ধের নায়ক বানানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সেই অপচেষ্টা সফল হয় নি। কারণ, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পেরেছে।

ড. হাছান বলেন, জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল। সেই জামায়ত এখন বিএনপির ছত্রছায়ায় রাজনীতি করার চেষ্ঠা করছে। তাদের অপচেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন। তা এখন দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমানকে লেখা পাকিস্তানী সেনাকর্মকতার চিঠির মাধ্যমে তা প্রমাণ হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে পাকিস্তান আর বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আর যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে বিএনপি যেমন বিরোধীতা করে, তেমনি পাকিস্তান তাদের জাতীয় পরিষদে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনে। এতেই প্রমাণ হয়, বিএনপির সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসাজশ ছিল এবং এখনও রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পানি খাওয়ানোর সামান্য অপরাধে অনেককে হত্যা করা হয়েছে এবং বাড়ী-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আর যেখানে জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ করছেন, আর তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আদর-যত্ন করে সেনানিবাসে রাখা হয়েছে। এটাও প্রমাণ করে তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসাজশ ছিল।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সাবেক সভাপতি মো. মুনির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট বলরাম পোদ্দার, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি এডভোকেট আসাদুজ্জামান দূর্জয় ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা। সূত্র : বাসস

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top