রাফির মৃত্যুর জন্য দায়ী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই : মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজি রিয়াজুল হক বলেছেন, আমরা অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আইনের দ্রুত ও কঠোর প্রয়োগ দেখতে চাই বলে জানান তিনি। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে নুসরাত হত্যার বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ  করে দিয়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। আজ সকালে ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর তার লাশ ফেনীতে নিয়ে যাওয়া হবে। বাদ আসর সোনাগাজী সাবের পাইলট হাইস্কুল মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রাফির মৃত্যুর ব্যাপারে বলেন, অপরাধ দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। এটা সবার জন্য রেড মেসেজ। এর পরিসমাপ্তি দরকার। সবাইকে নিয়ে আমরা একটি আইন করতে চাই, সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের বিষয়ে যাতে ভুক্তভোগী দ্রুত বিচার পান।
তিনি বলেন, ‘নুসরাতের অকাল মৃত্যু আমাদের সবাইকে নাড়া দিয়েছে। নুসরাত একজন প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে থাকবে।’

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা যখন দেখলাম অপরাধী অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাহকে আদালতে তোলা হয়েছে তার চেহারার মধ্যে কোনো অনুশোচনার চিহ্ন নাই। কোনো অপরাধবোধ আছে বলে মনে হচ্ছে না তার মধ্যে। আইনের কঠোর প্রয়োগ নাই বলে আজকে এমনটাই হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আশা করব তদন্তে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। তাছাড়া সাধারণ মানুষের একটা তদন্ত আছে সেটা আনুষ্ঠানিক না হলেও কিন্তু প্রশাসনের তদন্ত যাতে সাধারণ মানুষকে হতাশ না করে।

মানবাধিকার চেয়ারম্যান বলেন, নুসরাত একজন প্রতিবাদী মেয়ে। সে প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর। অনেকে প্রতিবাদ না করলেও কিন্তু নুসরাত ব্যতিক্রম। সে বলেছে, আমি প্রতিবাদ চালিয়ে যাব। এর বিচার দেখে যাব। আমরা দিনটিকে ‘নুসরাত ডে’ হিসেবে ঘোষণা করতে চাই। অপরাধের শাস্তি আমরা দেখতে চাই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগ নিয়ে নুসরাত থানায় যাওয়ার পর তার সাথে যে ব্যবহার করা হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। তারও বিচার চাই আমরা।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় লাইফ সাপোর্ট খুলে নুসরাত জাহান রাফিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা: সামন্ত লাল সেন তার মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। তার মৃত্যুর সংবাদে ফেনীসহ সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাফির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে এসে দুর্বৃত্তরা তাকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। পাঁচ দিন ধরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন রাফি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার নির্দেশ দিলেও শারীরিক অবস্থার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

গত ২৭ মার্চ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে রাফিকে যৌন হয়রানি করে। এ অভিযোগে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় তার এ করুণ পরিণতি বলে জানা যায়। এ দিকে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারে অধ্যক্ষ এস এম সিরাজউদদৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলো- পৌর কাউন্সিলর মাকসুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের। ইতোমধ্যে ওই মামলার তিন আসামিসহ অন্তত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ সাতজনকে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া তাকে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো: মোয়াজ্জেম হোসেনকেও প্রত্যাহার করা হয়। মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top