মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম ও সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী এবং জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মোঃ কায়সারের খালাস চেয়ে করা আপিল আবেদনের শুনানি শুরুর তারিখ ১৮ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ আজ বুধবার এ আদেশ দেন। আদেশে বলা হয় আগামী ১৮ জুন দুইটি আপিলেরই শুনানি হবে। এ বেঞ্চের অপর তিন বিচারক হলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সেদিন কার্যতালিকার ১ নম্বরে এটিএম আজহারুল ইসলাম এবং ২ নম্বরে সৈয়দ মোঃ কায়সারের আপিলের মামলা থাকবে। তিনি বলেন, আমরা দুটো একসঙ্গে দেখব, একটার পর একটা।
এটিএম আজহারুল ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং সৈয়দ মোঃ কায়সারের পক্ষে শুনানি করেন এস এম শাহজাহান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগের বুধবারের কার্যতালিকায় এটিএম আজহারুল ইসলাম ও সৈয়দ মোঃ কায়সারের আপিল আবেদন আদেশের জন্য এক ও দুই নম্বরে ছিল। একই সঙ্গে শুনানি মুলতবি চেয়েও তাদের পক্ষে আবেদন করা হয়।
২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর দেয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা থেকে খালাস চেয়ে ১১৩ টি যুক্তি দেখিয়ে এটিএম আজহার আপিল আবেদন করেন। আবেদনের সঙ্গে সাতটি খন্ডে ২৩৪০ পৃষ্ঠার দলিল দস্তাবেজ জমা দেয়া হয়।
এর আগে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এটিএম আজহারকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে দোষী সাব্যস্ত করে তিনটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য দুটি অভিযোগে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।
২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের পৃথক ছয়টি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সর্বমোট ১৯ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।
২০১২ সালের ২২ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের আদেশে রাজধানীর মগবাজারস্থ নিজ বাসা থেকে এটিএম আজহারকে গ্রেফতার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
অন্যদিকে ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সৈয়দ মোঃ কায়সার ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে ৫৬টি যুক্তি দেখিয়ে খালাস চেয়ে আপিল আবেদন দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর সৈয়দ মোঃ কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের পৃথক ১৬টি অভিযোগের ঘটনার মধ্যে ১৪টিতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
এর মধ্যে সাতটি অভিযোগে ঘটনায় পৃথক পৃথকভাবে প্রত্যেকটিতে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। চারটি অভিযোগের ঘটনায় আলাদাভাবে প্রত্যেকটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। অপর তিনটি অভিযোগে ২২ বছর কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রমাণিত না হওয়ায় অপর দুটি অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
সৈয়দ কায়সার ১৯৪০ সালের ১৯ জুন জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি কনভেনশন মুসলিম লীগে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি ১৯৭৯ সালে সিলেট-১৭ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং হবিগঞ্জ জেলার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে তিনি জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন এবং কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।
২০১৩ সালের ১৫ মে কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। একই বছরের ২১ মে তাকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করা হয়।