বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনা

ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটনে গত সোমবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের সাথে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এ অভিমত ব্যক্ত করেন। টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এটাই প্রথম বৈঠক। ড. মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রায় ৪০ মিনিটের এ বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি, রাখাইনে নিরাপত্তা অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাড়ানো, মুক্ত ও অবাধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাশেদ চৌধুরীকে প্রত্যার্পণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা হয়। দুই মন্ত্রী অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমনে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা নিয়ে আলাপ করেন।

মিয়ানমারের ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কট নিরসনের দায়িত্ব মিয়ানমারের ওপর রয়েছে। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের পরিবেশ মিয়ানমারকেই সৃষ্টি করতে হবে। রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলে জানান পম্পেও।

ড. মোমেন বলেন, জাতিসঙ্ঘ ও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশ নিজ খরচে ভাষানচরকে বসবাসের উপযোগী করে তুলছে।
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপগুলোর সমর্থিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
উভয় পক্ষ একমত হন, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বৃহত্তর অগ্রগতির জন্য আঞ্চলিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে প্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দকে সুশাসন, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন ও সমুদ্র নিরাপত্তা নিয়ে একসাথে কাজ করতে হবে।

ড. মোমেন গ্যাস ও তেল খাতে যুক্তরাষ্ট্রের আরো বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন। বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে উৎসাহিত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়া রাশেদ চৌধুরী বিচার এড়িয়ে চলছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আইনের শাসন সমুন্নত রাখা এবং সন্ত্রাস ও চরমপন্থা দমনে দুই দেশের অভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে রাশেদ চৌধুরীকে প্রত্যার্পণ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) উপ-মহাপরিচালক পদে আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রার্থী পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকের পর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ড. মোমেন বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা মানবাধিকারের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উত্থাপন করেনি, যা নিয়ে অনেকেরই শঙ্কা ছিল। আলোচনার বড় অংশজুড়ে ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার দিকটি খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করেছেন পম্পেও।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top