বছরে ৩০০ কোটি টাকা চাঁদা দিতে হয় রাজধানীর হকারদের

রাজধানীর হকারদের ৩০০ কোটি টাকারও বেশী চাঁদা দিতে হয়। যার কোন বৈধতা নেই। ওই টাকা রাজস্ব হিসেবে নিয়ে সিটি কর্পোরেশন হকারদের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারে। যার মাধ্যমে হকাদের জীবনমান উন্নয়ন ও পথচারীদের চলাচলের সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব। দীর্ঘ দিনের গবেষণা তথ্য তুলে ধরে এবিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন নগর গবেষক মারুফ হোসেন।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নগর ব্যবস্থাপনায় হকারদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন আয়োজিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক আব্দুল হাশেম কবীর।

আলোচনায় অংশ নেন সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, শিশু সংগঠক ডা. লেনিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, সংগঠনের উপদেষ্টা সেকেন্দার হায়াৎ, মুর্শিকল ইসলাম শিমুল প্রমুখ।

বৈঠকে মারুফ হোসেন আরো বলেন, যেখানে একজন হকারের (ডিম বিক্রেতা) ফুটপাতে ৫ বর্গফুট জায়গা লাগে, সেখানে একটি গাড়ি ১৬০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে সারাদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। অথচ যানজটের জন্য হকারদের দায়ি করে উচ্ছেদ ও তাদের মালামাল লুটপাট চলছে। যা অমানবিক। এধরণের অবাস্তব পদক্ষেপ থেকে সরে এসে যানজট নিরসনে সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সকল নাগরিকের অধিকার কায়েমের জন্য আমরা বুকের রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। আমাদের নাগরিকরা শতকরা ৯৫ ভাগ গরীব ও মধ্যবিত্ত। এর একটা অংশ হকার। আর হকারদের কাছ থেকে যারা ক্রয় করেন তারাও গরীব ও মধ্যবিত্ত মানুষ।

তিনি আরো বলেন, হকারদের বৈধতা দেন এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি স্বরূপ তাদেরকে আইডি কার্ড প্রদান করেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হকার সমস্যার সমাধান করেন।

সংসদ সদস্য শিরীন আখতার বলেন, হকাররাও মানুষ। তাদের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এই সরকারের আমলে গ্রামের মানুষ যেভাবে সুরক্ষা পাচ্ছে, একইভাবে হকারসহ শহরের মানুষদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে হকারদের জন্য আইন হয়েছে। বাংলাদেশেও একই ধরণের আইন ও নীতিমালা করতে হবে। এবিষয়ে সংসদে আলোচনা ছাড়াও বেসরকারী বিল উত্থাপনের আশ্বাস দেন তিনি।

গোলটেবিল বৈঠকে ১০ দফায় দাবি উত্থাপন করে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ বন্ধ, হকারদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, চাঁদাবাজী বন্ধ, হকারদের উপর দমন পীড়ন বন্ধ, প্রকৃত হকারদের তালিকাভুক্তিকরণসহ আইডি কার্ড প্রদান, দখলকৃত সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করে হকারদের পুর্নবাসন, হকারদের ট্যাক্সের অন্তর্ভুক্ত করা, হকারদের পুর্নবাসনের জন্য ৫ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা গ্রহণ এবং জাতীয় বাজেটে হকারদের জন্য বরাদ্দ রাখা।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top