সোনাগাজীর পৌর কমিশনার নুর নবী লিটনের ফেসবুক পোস্ট ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার নিজস্ব ফেসবুক পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো, ‘‘ঐতিহ্যবাহী সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসা, আমিও এক সময় এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমার এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে।
কাল দুপুর বারোটার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে থাকা অবস্থায় অনেকের কাছে কল পেলাম যে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সিরাজুল ইসলাম উনার মাদ্রাসার আলেম দ্বিতীয় বর্ষের নুশরাত নামের এক ছাত্রীকে পিয়ন নুরুল আলম কে দিয়ে নিজ অফিসে ডেকে নিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। আমিতো এমন খবর শুনে অবাক হলাম, লজ্জায় ঘৃণায় শিউরে উঠলাম। শেষমেষ সত্য ঘটনা জানার উদ্দেশ্যে থানায় গিয়ে উপস্থিত হলাম।
প্রিন্সিপাল তখন থানায় পুলিশের হাতে আটক, ভিকটিম চারজন বান্ধবী সহ তার মায়ের সাথে থানায় অফিসার ইন-চার্জ সাহেবের সাথে ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন। আমি সুযোগ করে তার বান্ধবী অন্যান্য ছাত্রীদের সাথে আলাপ করে প্রিন্সিপাল হুজুরের বিরুদ্ধে তাদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়ার মত উদ্বেগজনক অভিযোগ পেলাম। থানায় উতসুক জনতার ভীড়, হুজুরকে হাজতে নেয়া হলো। ভিকটিম নুশরাতের মা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে এ অবস্থায় আমি মাদ্রাসায় গিয়ে গোপনে তথ্য নিতে মাদ্রাসার ছাত্র/ছাত্রী, পরিচালনা পর্ষদ, অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীদের সাথে কথা বললাম। সার কথা হলো এই যে গূটি কয়েকজন ছাড়া সবাই বিষয়টাকে নিশ্চিত ষড়যন্ত্র বলে মতামত ব্যাক্ত করেন।
ধর্ষনের কথা প্রচার হলেও শেষে মামলা হলো শ্লীলতাহানীর। তা ছাড়াও নাকি মেয়েটা যখন প্রিন্সিপাল এর রুমে ঢোকে তখন তার বান্ধবী ক্লাশমেটরা নাকি রুমের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। তখন ক্লাশ চলাকালীন সময় বলে অনেক শিক্ষক ছাত্র/ছাত্রীর আনাগোনা ছিল। মেয়েটি অল্প সময়ে প্রিন্সিপাল হুজুরের রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে ক্লাশে যায় এবং সেখানে অসুস্থতার কথা বলে বাড়ী চলে যায়। পরে আবার লোকজন সহ মাদ্রাসায় এসে অভিযোগ করে।
আগের বক্তব্যে বলা হয়েছিল প্রিন্সিপাল এর রুমেই মেয়েটা অসুস্থ হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যায় কিন্তু পরে সেটা রহস্যজনক বলে মিথ্যা বলে প্রমানিত হল। যতদুর জানি নতুন পুরাতন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের গ্রুপিং, কমিটিতে অনেকের না আসতে পারা, কারো কারো কমিটি থেকে বাদ পড়া, জমি সংক্রান্ত বিরোধ, আগেকার এই মাদ্রাসা মার্কেট থেকে ইসলামী ব্যাংক সরানো নিয়ে এবং সহ-সভাপতি পদ প্রত্যাশী প্রভাবশালী এক ব্যাক্তির ইন্ধনে স্থানীয় অন্য এক প্রভাবশালী বাদ পড়া সদস্যের প্ররোচনায় এমনটা হয়েছে বলে তাদের অভিমত।
তা ছাড়া যে মেয়েকে নিয়ে এ ঘটনা তার নামেও অনেক অভিযোগ আছে বলে জানা যায়। এর আগে একবার মেয়েটা বাড়ী ফেরার পথে দুস্কৃতিকারীদের হাতে চুন সন্ত্রাসের শিকার হয়ে চোখ নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। এ ঘটনায় তখন মামলাও হয়েছিল। আজ এ ঘটনায় সোনাগাজী বাজারে জিরো পয়েন্টে পক্ষে বিপক্ষে সভা সমাবেশ, মানব বন্ধন হয়েছে। কোর্টে বাদিনীকে ও মামলার স্বাক্ষীদের ১৬৪ এ জবানবন্দি রেকর্ড হয় বলেও শুনেছি। আদালতে মামলা চলার কারনে মন্তব্য করবো না কারন তিনি দোষী নাকি নির্দোষ সেটা নির্ধারণ মহামান্য আদালতই করবেন তবে কারো কারো উনাকে দশ বিশ বছর জেল খাটানোর প্রকাশ্য হুমকি ও এ বিষয়ে কারো মাথা ঘামাতে বিভিন্ন জন কে বারন করার ধরন দেখে প্রশ্ন জাগে ঢাল মে কুচ কালা হ্যায় কিনা ?
সব শেষে বলবো যদি তিনি ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে থাকেন তবে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করবো আর যদি নিরপরাধ হয়ে থাকেন তবে সসম্মানে মুক্তির পাশাপাশি ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর কঠিন ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য জোর দাবী রাখলাম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত করেন, হেফাজত করেন আর সকল দুস্কৃতিকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে যেন কঠিন শাস্তির বিধান করেন,আমিন।
আমার একটা বিষয় মাথায় আসছেনা যে এত বড় একটা প্রতিষ্ঠানে কেন সি,সি ক্যামেরা লাগানো হলোনা? এত বড় মার্কেট ভাড়া , মাদ্রাসার আয় কোথায় যায়? আগের কমিটির লোকেরা কেন প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেনি? তা ছাড়াও পূর্বে যদি এমন কোন অভিযোগ থেকেই থাকে তবে প্রিন্সিপালের রুমটা সরিয়ে নিচে সহকারী প্রিন্সিপাল ও সহকারী শিক্ষকদের পাশে কেন নিয়ে আসা হয়নি তার কারন অজানা। অসচেতনতা যদি বলি তবে দায়িত্বশীল সচেতনদেরই বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটিগুলোতে নেয়া বা থাকা জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলে আমি মনে করি। ধন্যবাদ’’