ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল ছাত্র সংসদ গেল ২৮ বছর ধরে অকার্যকর থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঠিকই ফি নিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ঢাবিতে ভর্তির সময় ডাকসু ও হল ছাত্র সংসদের জন্য ১২০ টাকা ফি দিতে হয়। বর্তমানে ঢাবিতে ৩৭ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। সেই হিসেবে এক বছরে তাদের থেকে আদায় হয় সাড়ে ৪৪ লাখ টাকা। আর গত ২৮ বছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। কিন্তু এ বিশাল অর্থ কোন কোন খাতে খরচ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা জানেন না শিক্ষার্থীরা। আর জানেন না নবনির্বাচিত ডাকসু প্রতিনিধিরাও। এখন সেই ১২ কোটি টাকার হিসাব চেয়েছেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।
ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ ও ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ডীন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সভাপতিত্বে রোববার ডাকসুর প্রথম বাজেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উপস্তিত ছিলেন, ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসাইন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মক্তিযুদ্ধ সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ ডাকসুর ২৫ জন প্রতিনিধি।
সভায় সেই ১২ কোটি টাকার আয় ও বয়ের জন্য অডিট দাবি করেছেন ডাকসুর নবনির্বাচিত প্রতিনিধিরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডাকসুর একাধিক নির্বাচিত প্রতিনিধি।
এছাড়া সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনা, গরীব এবং অসহায় শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন সোর্স থেকে বৃত্তির ব্যবস্থা, বিভিন্ন লেখালেখিতে যুক্তদের বই লেখার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা, ক্যাম্পাসে বহিরাগত যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ, মাদকদ্রব্য সমস্যার সমাধান ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতার দাবি জানান ডাকসুর প্রতিনিধিরা।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইতিবাচক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে গড়ে তুলতে বছরে এক কোটি ৪৫ লাখ টাকার বাজেট পেশ করেন ডাকসুর সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার।
ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ডাকসুর সম্পাদকদের কার কী কাজ তা অনেকেই জানেন না। আমরা শুরুতেই এই বিষয়টি নিয়ে এলোচনা করেছি। এছাড়া আমরা গরীব এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সোর্স থেকে বৃত্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছি। একই সাথে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা লেখালেখি করে তারা যেন বই লিখতে আগ্রহী হয় সেজন্য তাদের একটা ফান্ড দরকার। আমরা যাতে তাদের সহযোগিতা করতে পারি সে বিষয়টি নিয়েও কথা হয়েছে।
নুর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলগুলোর ক্যান্টিন এবং ক্যাফেটরিয়ার খাবারের মান খুবই খারাপ। এসব মালিকদের ডেকে তাদের সাথে আলোচনা করে খাবারে মূল্য এবং মানের বিষয়টি ঠিক করার প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি ডাকসুর সংগ্রহশালার কমিটি করে স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ, ক্যাম্পাসে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ, বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ এবং ছিনতাই প্রতিরোধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নেয়ার দাবি করেছেন।
ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, গত ২৮ বছর ধরে ডাকসু অচল থাকলেও এতোদিন ধরে শিক্ষার্থীরা ডাকসু ও হল সংসদের ফি দিয়ে আসছে। কিন্তু ডাকসু অকার্যকর থাকায় এসব টাকার বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তাই এই টাকা কোন কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য আমরা অডিট করার দাবি জানিয়েছি।
তিনি বলেন, ঢাবিতে প্রথম স্বাস্থ্যবীমা চালু হয় স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে। এটি সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে চালু করা হোক।
একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে ফ্রি ওয়াইফাইয়ের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। সেই সাথে দাবি জানান বাইক সার্ভিস এবং বিভিন্ন মাঠের বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করার।
এ বিষয়ে ডাকসুর সভাপতি ও ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান বলেন, ডাকসুর সদস্যদের নিয়ে আমরা একটি অনুষ্ঠান করব। সেখানে একজন সাবেক ভিপি থাকবে। তিনি তার অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করবেন। এর মাধ্যমে ডাকসুর সকল প্রতিনিধি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পাবে।
ডাকসুর বাজেটের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক সম্পাদক তার বরাদ্দকৃত টাকা স্ব স্ব খাতে ব্যয় করবে।