বাংলাদেশে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মধ্যে কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব ও টানাপড়েন চরমে উঠেছে। যার জের ধরে অব্যাহতি দেয়ার ১২ দিনের মাথায় জিএম কাদেরকে আবারো কো-চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহাল করেছেন দলটির প্রধান এইচ এম এরশাদ।
চলতি বছরের ১৭ই জানুয়ারি জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করে রংপুরে হাস্যোজ্বল মুখেই হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেছিলেন মি. কাদেরই তার অবর্তমানে দলের নেতৃত্ব দেবেন। একইসাথে পরে সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবেও মি. কাদের মনোনীত হবার পর মোটামুটি সবাই নিশ্চিত ছিলো যে ৯০ বছর বয়সী এরশাদের পর দলের নেতৃত্বে আসবেন জি এম কাদেরই। কিন্তু তার সেই সিদ্ধান্ত টিকেছিল মাত্র দু’মাসের মতো।
গত ২২শে মার্চ এক ঘোষণায় প্রথমে কো-চেয়ারম্যান ও পরে সংসদ উপনেতার পদ থেকে ভাইকে সরিয়ে স্ত্রী রওশন এরশাদকে মনোনয়ন দেন তিনি। এর মাত্র ১২ দিনের মাথায় কো-চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদেরকে পুনর্বহাল করেন জেনারেল এরশাদ।
তবে তিনি সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতার পদ ফিরে পাবেন কি-না সে বিষয়ে এরশাদ বা দলের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী খুরশীদা বেগম বলছেন, জাতীয় পার্টিতে এখনও এরশাদকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ নেই, এ সত্ত্বেও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের কারণেই দলটিতে এক ধরনের সঙ্কট রয়েছে।
তিনি বলেন,‘জাতীয় পার্টির মধ্যে যে বিরোধ চলছে সেটা সব দলেই থাকে। দলে যদি তেমন কেউ থাকতো অন্যদের প্রভাবিত করার মতো তাহলে এরশাদ হয়তো এভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না। এখানে বিষয়টি তো পূর্ব নির্ধারিত। তারপরেও বিরোধী পক্ষ আছে। তাদের মধ্যে হয়তো নেতা হওয়ারও ইচ্ছা আছে।’
দলটির মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা বলেছেন, জিএম কাদের ও রওশন এরশাদকে ঘিরে দুটি বলয় গত এক দশক ধরেই সক্রিয় রয়েছে জাতীয় পার্টিতে।
২০০৮ সালের পর আওয়ামী লীগের প্রথম আমলে জিএম কাদের এবং দ্বিতীয় আমলে রওশন এরশাদ পক্ষ কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলো। কিন্তু এবার ৯০ বছর বয়সী এরশাদের অসুস্থতার কারণে দলটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে জিএম কাদেরের পক্ষ ও বিপক্ষ উভয়েই মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন তারা।
যদিও বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব বা সরকারকে সমর্থন দেয়া নিয়ে বারংবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নানা ধরণের চাপের বিষয়টিও উল্লেখ করছেন কেউ কেউ।
দলটির একজন ভাইস চেয়ারম্যান উত্তরাঞ্চলীয় জেলা লালমনিরহাটের আদীতমারি উপজেলায় জাতীয় পার্টি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নিগার সুলতানা রানী বলছেন, তার ধারণা এরশাদের অসুস্থতার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে দলে।
তিনি বলছেন,‘মাঠ পর্যায়ে আমাদেরকে অনেক বিব্রত হতে হয়। নেতৃত্ব নিয়েই টানাপড়েন বা কোন্দল। এরশাদ ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন জিএম কাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে। হঠাৎ করেই তাতে পরিবর্তন এলো। বয়স হবার কারণেই সিদ্ধান্ত অনড় থাকতে পারছেন না চেয়ারম্যান আর সে সুযোগই নিচ্ছে কেউ কেউ।’
জিএম কাদের অবশ্য বলছেন, টানাপড়েন দলকে নিয়ে নয় বরং তাকে নিয়েই হচ্ছে। এবং পুরো বিষয়টি তিনি দলের চেয়ারম্যান এরশাদকে অবহিত করেছেন বলেও বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন তিনি।
জি এম কাদের বলেন,‘নেতৃত্ব মোটামুটি ঠিক ছিলো। তবে আমাকে নিয়ে (সরাতে) অনেক চেষ্টা হয়েছে কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। নেতাকর্মীদের আস্থা আছে আমার প্রতি। চেয়ারম্যানও জানেন। তাই টানাপড়েনটা সমস্যা বলে মনে করছি না। তবে ভালো হয়েছে যে এটা এখনই প্রকাশ হয়ে গেছে।’
তবে দলের মধ্যে রওশন এরশাদপন্থী হিসেবে পরিচিত নেতারা এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি। সূত্র : বিবিসি বাংলা।