নিউজিল্যান্ডের হ্যামিলটন নগরীর কাউন্সিলর ও আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী জেমস ক্যাসন শেষ পর্যন্ত মুসলমানদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর হ্যামিলটনের জামিয়া মসজিদের সামনে উপস্থিত মুসলমানদের কাছে ক্ষমা চান তিনি। ক্যাসন এসময় বলেন, সমগ্র মুসলমান সম্প্রদায় ও আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টে যারা কষ্ট পেয়েছেন তাদের সবার কাছে আমি দুঃখিত।
ক্রাইস্টচার্চে মুসলমানদের ওপর দুটি মসজিদে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে সেই ঘটনার পর পুরো দেশটি যে বিনীত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা পছন্দ হয়নি শ্বেতাঙ্গবাদী জেমস ক্যাসনের। এই ঘটনার বিষয়ে এবং অতীতে একবার উদ্বাস্তুদের নিয়ে কটুক্তি করেছিলেন তিনি।
গত সপ্তাহে এক ফেসবুক পোস্টে এ বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন ক্যাসন। তার পোস্টে নিউজিল্যান্ড সরকারের আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, হামলাকারীর ইশতেহার নিষিদ্ধ করা এবং তার নাম উচ্চারণ না করার যে ঘোষণা দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডের্ন দিয়েছিলেন তার নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছিল। ওই ফেসবুক পোস্টে হত্যাকারী টেরন্টের প্রশংসাও করেছিলেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।
আর ২০১৬ সালে তার এক পোস্টে ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলার জন্য উদ্বাস্তুদের দায়ী করা হয়েছিল।
তার এই মন্তব্য ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয় নিউজিল্যান্ডের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কাউন্সিল অধিবেশনে এই ঘটনাকে কলঙ্ক হিসেবে আখ্যায়িত করেন আরেক কাউন্সিলর ডেভ ম্যাকফারসন। ফেসবুক টুইটারেও ব্যাপক সমালোচনা হয়। এক পর্যায়ে ক্যাসন ফেসবুক থেকে তার পোস্টটি মুফে ফেলেন এবং স্থানীয় জামিয়া মসজিদের কাছে গিয়ে মুসলমনাদের সাথে দেখা করে তাদের কাছে ক্ষমা চান। সেখানে তিনি ওয়াইকাটো মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ড. আসাদ মহসিনসহ অন্যান্য নেতাদের সাথে দেখা করেন। একই দিন ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকেও একটি পোস্ট দেন ক্যাসন।
ড. মহসিন বলেছেন, কাউন্সিলর জেমস ক্যাসনের মন্তব্যে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। যে কারণে তিনি মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রত্যেক সদস্যের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। অনেকেই এমন ঘটনা মেনে নিতে পারেননি।
তিনি বলেন, এ ঘটনা থেকে ক্যাসন একটি শিক্ষা পেয়েছেন। আশা করি বিষয়টি ভবিষ্যত খেয়াল রাখবেন।
ড. মহসিন আরো বলেন, মুসলমান সম্প্রদায় তার ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি সুন্দরভাবে গ্রহণ করেছে। ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন ক্যাসনের মন্তব্যের তীব্র বিরোধীতা করা কাউন্সিলর ম্যাকফারসন। তিনি নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে বলেছন, ক্ষমা চাওয়ার ঘটনাটি ছিলো আবেগী ও আন্তরিক পরিবেশে।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে গত ১৫ মার্চ দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছে ৫০ জন মুসুল্লি। ট্যারন্ট নামের এক অস্ট্রেলীয় শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী এই হামলা চালায়। ওই ঘটনার পর শান্তির দেশ হিসেবে খ্যাত নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারন নাগরিকরা পাশে দাড়িয়েছে মুসলমানদের। অস্ত্র আইন কঠোর, মুসলমানদের নিরাপত্তা বৃদ্ধিসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে দ্রুততার সাথে। মুসলমান সম্প্রদায়ের পাশে দাড়িয়ে সংহতি সমাবেশ করেছে স্থানীয় নাগরিকরা। যে ঘটনায় নিউজিল্যান্ডের মানুষের আন্তরিকতা ও ঐক্য আবারো ফুটে উঠেছে। স্থানীয় মুসলমানরাও বলেছেন, এক সন্ত্রাসীর হত্যাকাণ্ডে নিউজিল্যান্ডের ঐক্য বিনষ্ট হতে পারে না। আমরা আগের মতোই ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসকে মোকাবেলা করবো।