সরকারের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও পাটকল শ্রমিকদের মজুরী কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে আন্দোলনরত পাটকল শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ পাটকল শ্রমিকদের দাবিসমূহ দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করে শিল্পের অসন্তোষ নিরসনে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বুধবার পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, আমাদের ঐতিহ্যের অহংকার পাট শিল্প আজ ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের পথে। যেটুকু টিকে আছে তা ধুকে ধুকে চলছে। সবচাইতে কষ্টে আছেন এর শ্রমিকরা।
বিবৃতিতে তারা বলেন, অবসরে যাওয়া পাটকল শ্রমিকরা সবচাইতে বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছেন। চাকরি থেকে অবসরের সময় শুন্য হাতে তাদের বাড়ি যেতে হয় এবং তারা নিদারুন সংকটে পড়েন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে তারা প্রভিডেন্ড ফান্ড-গ্র্যাচুইটি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল শ্রমিকরা তাদের বহুদিনের বকেয়া সপ্তাহ পরিশোধ, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের পিএফ-গ্র্যাচুইটি ও মৃত ব্যক্তিদের বীমার বকেয়া পরিশোধ, শ্রমিক কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ, ছাটাইকৃত শ্রমিকদের কাজে পূণর্বহালের দাবি ও শিল্প রক্ষার জন্য পাটমৌসুমে পাট ক্রয়ে অর্থ বরাদ্দ এবং পুরনো মেশিন আধুনিক ও কর্মক্ষম করতে ‘বি এম আর আই’ করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, পাটজাত পণ্যের চাহিদা রয়েছে এবং এই শিল্প অলাভজনক নয়। পরিবেশ রক্ষায় পাটপণ্যের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই শিল্পের যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন ঘটিয়ে এই শিল্পকে রক্ষা ও এগিয়ে নিতে সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল শ্রমিকদের ধর্মঘটে বাম জোটের সমর্থন
এদিকে রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল শ্রমিকদের ধর্মঘটের প্রতি বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতৃবৃন্দ সমর্থন দিয়েছেন। সরকারের কাছে তারা অবিলম্বে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান।
বুধবার জোটের এক সভায় এই সমর্থনের ঘোষণা দেয়া হয়। বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, খালেকুজ্জামান, শাহ আলম, মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, সাইফুল হক, আকবর খান, জোনায়েদ সাকি, ফিরোজ আহম্মেদ, মোশাররফ হোসেন নান্নু, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, মোশরেফা মিশু, হামিদুল হক সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে দেয়া এক বিবৃতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানিয়ে অবিলম্বে ঘোষিত মজুরি কমিশন প্রদান, বকেয়া বেতন পরিশোধ, পাটখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ ৯ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল কেন বছরের পর বছর লোকসান দিচ্ছে এর জবাব সরকারকে দিতে হবে। মাথাভারী আমলা-প্রশাসন পোষা, সময় মতো অর্থ ছাড় না করে অসময়ে পাট কেনা, পুরানো যন্ত্রপাতি নবায়ন ও আধুনিকায়ন না করাসহ নানা দুর্নীতি অনিয়মই যে লোকসানের কারণ তা বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় আসলেও এ সমস্যা নিরসনে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত সমস্যা দূর করে লোকসান বন্ধ ও শ্রমিকদের মজুরিসহ ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
এদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের অপর এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়- হাজার হাজার হকারকে পুনর্বাসন না করে ঢাকার রাজপথ থেকে উচ্ছেদ করে সিটি কর্পোরেশন এক অমানবিক কাজ করছে। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ বন্ধ এবং হকারদের লক্ষ লক্ষ পরিবারের জীবিকার কথা চিন্তা করে ফুটপাথে বসার অনুমতি দেয়ার দাবি জানান।
একই সাথে ফুটপাথে হকারদের কাছ থেকে পুলিশ ও সরকার দলীয় বিভিন্ন লীগের সন্ত্রাসী-মাস্তানদের চাঁদাবাজী বন্ধেরও জোর দাবি জানান।