অন্তর্বর্তী চাহিদা মেটাতে কেনা হচ্ছে ২০ লাখ মেশিন রিড্যাবল পাসপোর্ট

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুলাই মাস থেকে দেশের নাগরিকরা ‘ই-পাসর্পোট’ পেতে শুরু করবেন। কিন্তু এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন চাহিদা মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ মেশিন রিড্যাবল পাসপোর্ট (এমআরপি) কিনছে সরকার। প্রতিটি এমআরপি পাসপোর্টের মূল্য পড়বে প্রায় সাড়ে ৩ মার্কিন ডলার। একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান এই পাসপোর্টগুলো সরবরাহ করবে। এর আগেও একই প্রতিষ্ঠান সরকারকে এমআরপি সরবরাহ করেছিল। তবে জরুরি ভিত্তিতে এই পাসপোর্ট সরবরাহের কারণে এবার ব্যয় ১০ ভাগ বাড়বে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পরিবহন ব্যয়সহ ২০ লাখ এমআরপি কিনতে (প্রতিটি বুকলেট ১.৩১৪ ডলার ও প্রতিটি লেমিনেশন ফয়েল ১.১ ডলার দরে) ব্যয় হবে ৪৮ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৬ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী টাকায় এর মূল্যমান হচ্ছে ৪০ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অতি সম্প্রতি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ডিসেম্বর (২০১৮) থেকে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার কথা ছিল। সরবরাহকারী জার্মান প্রতিষ্ঠান ‘ভেরিডোস’-এর সাথে রি-শিডিউল অনুযায়ী, আগামী জুলাই (২০১৯) থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি চালু হবে।

দেশের বাইরে সব মিশন ও অভ্যন্তরীণ পাসপোর্ট অফিসগুলোতে এটি পুরোপুরি চালু হতে দুই বছর সময় লাগবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পাসপোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন চাহিদা পূরণের জন্য আগের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যের ‘ডি লা রু ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’ থেকে প্রথম দফায় অতিরিক্ত ৫০ লাখ এমআরপি বুকলেট ও ৫৫ লাখ লেমিনেশন ফয়েল ক্রয়ের সম্পূরক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। মূল চুক্তি মোতাবেক এতে প্রতিটি বুকলেট ১.১৯৪ মার্কিন ডলার ও প্রতিটি লেমিনেশন ফয়েলের মূল্য ১ মার্কিন ডলার রাখা হয়েছিল। মূল চুক্তিতে ১ কোটি ৫০ লাখ পাসপোর্ট ও সমপরিমাণ লেমিনেশন ফয়েল ক্রয় করা হয়েছিল। কিন্তু পাসপোর্টের মজুদ কমে যাওয়ায় বর্তমানে দ্বিতীয় দফায় আরো ২০ লাখ বুকলেট ও ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে আগের দরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি ব্যয় হচ্ছে। নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হলে পাসপোর্ট পেতে ১০ থেকে ১২ মাস সময় লাগবে বিধায় আগের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই পাসপোর্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে বৈঠক সূত্র জানায়।

সরকারি ক্রয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দৈনিক গড়ে এমআরপি পাসপোর্টের চাহিদা হচ্ছে ২০ হাজার। প্রতি মাসে পাসপোর্ট লাগে প্রায় ৪ লাখের বেশি এবং হজের মওসুমে চাহিদা আরো ২ লাখ বেড়ে যায়। এর বিপরীতে গত ১২ মার্চ তারিখে মোট এমআরপি পাসপোর্ট বুকলেটের সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯৩টি এবং লেমিনেশন ফয়েলের সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৯৩ হাজার ২৩০টি। এর মধ্যে পাসপোর্ট সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছে ১৭ লাখ ৪৪ হাজার এবং প্রকৃত মজুদের সংখ্যা হচ্ছে মাত্র ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৩টি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০ লাখ এমআরপি কেনার অনুমোদন ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে পাসপোর্টগুলো আমাদের হাতে আসা শুরু হবে।

এ দিকে আগামী জুলাই মাস থেকে যে ই-পাসপোর্ট দেয়া হবে তা এমআরপি অপেক্ষা অধিক নিরাপদ। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১১৮টি দেশে এ ধরনের পাসপোর্ট চালু রয়েছে। ‘ই-পাসপোর্ট’ চালু হলে বর্তমান এমআরপির ডাটাবেজ থেকে সব তথ্য ই-পাসপোর্ট ডাটাবেজে স্থানান্তর করা হবে এবং বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে চাহিদা মোতাবেক পর্যায়ক্রমে ‘ই-গেট’ স্থাপনের মাধ্যমে ‘ই-পাসপোর্ট’ ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হবে বলে জানা গেছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top