বিএনপিকে মূল সাংগঠনিক শক্তি মেনে নিয়েই সামনে এগোবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অনাকাক্সিক্ষত নির্বাচনী ফলাফলের পরে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপির দলীয় ফোরামে যে প্রশ্ন উঠেছে, তার প্রেক্ষিতে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে নেতারা স্পষ্টভাবেই এমন মত দিয়েছেন।
তারা বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টকে আগামী দিনে আরো সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে হবে। আর সেটি করতে হবে ফ্রন্টের মূল দল বিএনপির দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তাকে ধারণ করেই। এ কারণে কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকেও তারা এখন থেকে আরো বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরবেন।
জানা গেছে, ঐক্যফ্রন্ট থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কোনো কর্মসূচি আসছে না, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির বিভিন্ন স্তরে এমন আলোচনাকে আমলে নিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। এর ফলে ফ্রন্টের গত ২৯ মার্চের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনার বিষয় ঠিক করতে গিয়ে প্রথমে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এর সাথে দ্বিতীয় বিষয় হিসেবে যুক্ত করা হয় দ্রুত নির্বাচন দেয়ার দাবি।
স্টিয়ারিং কমিটির ওই বৈঠকে কমপক্ষে দু’জন নেতা বলেন, ঐকফ্রন্টকে ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু সেটি কোনোভাবেই সফল হতে দেয়া হবে না। বিএনপি ফ্রন্টের সবচেয়ে বড় দল। সেটিই ঐক্যফ্রন্টের শক্তি। বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হলে ঐক্যফ্রন্টও শক্তিশালী হবে। নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে কোনো সফলতা আসবে না, এগোতে হবে একসাথেই।
ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির ওই বৈঠকের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে গত রোববার প্রেস ক্লাবে ফ্রন্টের স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায়। সভায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির সাথে সহমত পোষণ করে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘অন্যায়ভাবে যাদেরকে বন্দী করে রাখা হয়েছে তাদেরকে মুক্ত করা হোক। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই।’
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করার পাশাপাশি ফ্রন্টের সব নেতা ঐক্যের ওপরও জোর দিয়ে কথা বলেছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনগণকে সাথে নিয়ে মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধার করার জন্য ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি। আজকে সরকার চেষ্টা করছে এই ঐক্যকে ভেঙে ফেলার। এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, নিজেদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি যদি থাকে সেটা মিটিয়ে নেন। ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে যদি প্রশ্ন থাকে সেটারও নিষ্পত্তি করেন। কিন্তু আমাদের এক হয়ে নামতে হবে রাস্তায়। আমাদের কারোই ঐক্যফ্রন্ট ছেড়ে যাওয়ার শক্তি নেই, ঐক্যফ্রন্ট রাখতে হবে, একে শক্তিশালী করতে হবে।
ঐক্যফ্রন্টের সাথে যুক্ত বিএনপির সিনিয়র এক নেতা আলাপকালে বলেছেন, নির্বাচনের আগেও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার মধ্যে ছিল। কিন্তু নির্বাচনের পরে সেটি ফ্রন্টের নেতারা খুব একটা আলোচনায় আনেনি। স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় ফ্রন্টের নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিটি ১ নম্বর অ্যাজেন্ডা করায় ভুল বোঝাবুঝি দূর হবে।
জানা গেছে, চলতি মাসে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ, মতবিনিময় কিংবা গণশুনানির মতো কর্মসূচি রয়েছে ঐক্যফ্রন্টের। এসব কর্মসূচিতে ৩০ ডিসেম্বরের অনিয়মের নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিটিও জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। চট্টগ্রামে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সফরের মধ্য এ কর্মসূচি শুরু হতে পারে।
রমজানেও সাংগঠনিক নানা কর্মসূচি থাকবে ফ্রন্টের। রমজানের পরে একাদশ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীদের ঢাকায় এনে একটি বড় সমাবেশ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সভা-সমাবেশ সফলে ঢাকা মহানগর ঐক্যফ্রন্টকে শক্তিশালী করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মহানগরের সমন্বয় কমিটি এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে একটি বৈঠকে বসবে। ঢাকার বাইরে অন্যান্য মহানগরেও ঐক্যফ্রন্টের কমিটি গঠন করা হবে।
ঐক্যফ্রন্টের দফতর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু জানিয়েছেন, ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের অনিয়ম নিয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি যে গণশুনানি করেছে ঐক্যফ্রন্ট, তা শিগগিরই বই আকারে বের করা হবে। ওই শুনানিতে বিচারকের দায়িত্বে থাকা বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও মূল্যায়ন ছাপা হবে বইয়ে। ভোট ডাকাতির সচিত্র বর্ণনাসংবলিত ওই বই দেশি দূতাবাসে দেয়া হবে। একই সাথে পাঠানো হবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছেও।