বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্রবীণ আইনবিদ খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, সরকার কারাবন্দীদের প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে ২০১৬ সালের ১ জুন যে নীতিমালা প্রকাশ করেছে, সেখানে সাজাপ্রাপ্তসহ সবাই প্যারোলে পেতে পারেন। সাধারণ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জেলা প্রশাসক দিতে পারেন। বিশেষ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ক্রমে যেকোনো ব্যক্তিকে যেকোনো দিন যত দিন খুশি প্যারোলে দিতে পারেন। আমরা ইতিপূর্বেও দেখেছি আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তিনিও কিন্তু প্যারোলে গিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করে এসেছেন। আমাদের অ্যাক্টিং (বিএনপির) চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্যারোলে গিয়ে চিকিৎসার অবস্থায় আছেন। অতএব প্যারোল সম্পর্কে এ ধরণে বিভ্রন্তি থাকার কারণে এই ব্রিফিং। রোববার সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের নিজ চেম্বার এক ব্রিফিংয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে কি প্যারোলের চিন্তা করছেন? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, না, সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সেখানে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আমরা তার মামলা করি। প্যারোলটা মামলা সংক্রান্ত ব্যাপার নয়। এটা একটা বিশেষ বিধান। যখন একটি লোক চরম অসুস্থ হয়ে পড়েন তার চিকিৎসা দরকার, আর আইন অনুযায়ী আদালতে জামিন পেতে তার অনেক সময় লেগে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকার ইচ্ছা করলে তাকে প্যারোলে মুক্তি দি পারেন। চিকিৎসার জন্য দিতে পারেন। বিশেষ কারণে দিতে পারেন। সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিকার সংরক্ষণ করা আছে। যেকোনো সময়ের জন্য প্যারোল দিতে পারেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়া প্যারোল চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, ম্যাডাম খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত, যারা নীতি নির্ধারক আছেন তাদেরও সিদ্ধান্ত দরকার হবে, যার জন্য তারও সিদ্ধান্ত দরকার হবে। স্ট্যান্ডিং কমিটি যদি তাকে পরামর্শ দেন, সে পরামর্শ অনুযায়ী তিনি প্যারোলে যাবেন কী যাবেন না এটা সম্পূর্ণ তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত ।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইন বলে সাজাপ্রাপ্ত এবং কয়েদি, হাজতি সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। ২০১৬ সালে যে নতুন নীতিমালা হয়েছে, সেখানে সাজাপ্রাপ্ত বা হাজতি এখানে কোনো পার্থক্য নেই। এটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে সরকারের উপর।
তিনি আরো বলেন, প্যারোল যিনি দেবেন তিনি নির্ধারণ করবেন কত দিন প্যারোলে থাকবেন, কত দূর যাবেন। এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্ত। এখানে কোনো আইনের বিধান নেই। আদালতের কোনো ভূমিকা নাই। প্যারোল দিবেন কিনা সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। আবার যার দরকার তিনি নিবেন কিনা সেটাও তার সিদ্ধান্ত।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আদালতের আদেশে বা সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্তে প্যারোলে মুক্তির প্রয়োজন হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো বন্দিকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া যায়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি সাজাপ্রাপ্তসহ সকল কারাবন্দীর ব্যাপারে প্রযোজ্য হবে। এ ব্যাপারে আইনগত বিধান সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞ আইনজীবী বক্তব্য দিচ্ছেন, তা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক নয়।