বনানীর এফআর টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যর্থতায় দায় এড়াতেই সরকার বিএনপির ওপর ‘উদোর পিন্ডি বুদোঁর ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার রাতে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি তাসভীর উল ইসলামকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গ টেনে রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় দলের তিনি এই অভিযোগ করেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখন তিনি কৌশল নিয়েছেন। যা কিছু ঘটবে- বিএনপির ওপর দোষ চাপাও। তাসভীর উল ইসলাম কুড়িগ্রাম বিএনপির সভাপতি, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। এই (এফআর) বিল্ডিংয়ের সাথে তার সম্পর্ক কী? ওইটার তো তিনি জমির মালিক নন, ওই বিল্ডিংয়ের নির্মাণকারীও তিনি নন। তাহলে তাকে গ্রেফতার করলেন কেন?
তিনি আরো বলেন, তাকে আটকের উদ্দেশ্য একটাই – জনগণকে দেখানো যা কিছু হয়, যা কিছু ঘটে তার সাথে বিএনপি জড়িত। উদোর-পিন্ডি বুদোঁর ঘাড়ে চাঁপানোর জন্যই আজকে তাজভীর উল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী উলামা দলের উদ্যোগে সংগঠনের সদ্য মরহুম সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেনের স্মরণে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ নেছারুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, উলামা দলের মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, শামসুর রহমান খান, গোলাম মোস্তফা, প্রয়াত হাফেজ আবদুল মালেকের ছেলে রেদোয়ান আহমেদ, মরহুম মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে কামরুজ্জামান কামরুল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
রিজভী বলেন, মানুষকে বাঁচানো, মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার, দুর্যোগের মধ্যে মানুষকে সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী করেননি। এখন প্রত্যেকটা ঘটনার মধ্যই আপনি দেখানোর চেষ্টা করেন বিএনপি দায়ী। এজন্যই করেন যে, আপনার আর কোনো সমর্থন নেই, মিডনাইট নির্বাচন করে ধিকৃত, অবৈধ সরকার হয়ে ধিকৃত, জনগণের শত্রু হয়ে ধিকৃত। তাই আপনাকে হারিক্যান নিয়ে খুঁজে বেড়াতে হয়- কোথায় বিএনপি আছে, কোথায় বিএনপি আছে। এখন ঘৃণ্য কাজ শুরু করেছে এটি বিএনপির ঘাড়ে চাঁপিয়ে দেয়ার জন্য। এখন সবাই জানে- এই জমির মালিক কে ছিলো, ডেভেলপার কে ছিলো, তার সাথে সরকারের কী সম্পর্ক। আমি এফআর বিল্ডিংয়ে অগ্নি প্রজ্জ্বলনে ২৬ জন মানুষের মৃত্যুর নিন্দা জানাই। এই মৃত্যুতে সরকারের ব্যর্থতার নিন্দা জানাই।
প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, তাসভীর উল ইসলাম তো ওই বিল্ডিংয়ে তিনটা ফ্ল্যাট কিনেছেন। কার কাছ থেকে? ‘রূপায়ন’ এর কাছ থেকে। রূপায়ন কে ? আপনি (প্রধানমন্ত্রী) সেটার ইঙ্গিত দিচ্ছেন না। সরকার সমর্থিত -সেটা বলছেন না। তিনি ফ্ল্যাট কিনেছেন যখন বিল্ডিং হয়ে গেছে। সে দায়ী হয়ে গেলেন, সে গ্রেফতার হয়ে গেলো। আর যারা সরকারের সাথে জড়িত সেটার ডেভেলপার, সেটার মালিক তারা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ায় ওই বনানীতে।
তিনি অভিযোগ করেন, বনানীতে আরেক অভিজাত হোটেল যেটার যত তলা হওয়ার কথা, যত বলা অনুমতি আছে- সেটা এই সরকার আসার পর আরো ৫/৬ তলা বাড়ানো হয়েছে। ইকবাল টাওয়ারের কথা আমি বলতে চাই না। তার বিল্ডিং কোড কত, আজকে কত তলা? ওইখানে হাত দেবে না। কারণ ওইটার মালিক যে ক্ষমতাসীন দলের সাথে জড়িত।
অগ্নিকাণ্ড থেকে জীবন রক্ষায় সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই মন্তব্য করে রিজভী বলেন, সরকার ফায়ার সার্ভিসকে উন্নত করেনি। আজকে হেলিকপ্টারে করে হাতিরঝিল থেকে পানি নেয়, সেই পানি বালতির মধ্যে থাকে না। এফআর টাওয়ারের ধুঁয়া-আগুন থেকে রক্ষায় মানুষ যখন উঁচু তলা থেকে লাফ দিচ্ছে তখন আপনার ফায়ার সার্ভিসের নেট বা জ্বাল নাই কেনো? ফায়ার সার্ভিসের আধুনিক সরঞ্জামাদি নেই কেনো? আজকে শেখ হাসিনা জোর করে ক্ষমতায় থাকছেন। ক্ষমতার মসনদ, ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছেন পুলিশ-র্যাব-বিজিবি দিয়ে। কেউ প্রতিবাদ করলে গুলি ছুঁড়ছে বিএনপির দিকে, নেতা-কর্মীদের ওপর। সেদিন আপনি তো মানুষকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করেননি।
তিনি বলেন, শর্টগানের জন্য ৩০ লাখ কার্তুজ ঠিকই কিনেছেন, ৩০ হাজার এলপি বন্দুক কিনেছেন। কারণ আওয়াজ দেখলেই গুলি করো, বিএনপি দেখলেই গুলি করো, তাদেরকে লাশ করে দাও। প্রধানমন্ত্রী লাশে বিশ্বাস করেন। আপনার আস্থা লাশে- সে বিএনপি হোক, বিরোধী দল হোক আর সাধারণ মানুষ হোক। মানুষের পোঁড়া গন্ধ আপনার ভালো লাগে।
মরহুম হাফেজ আবদুল মালেক ও মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন রিজভী।