কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া ছয় মাসের জামিন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত।
হাইকোর্টের দেয়া জামিনাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ রোববার চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের আদালত এ আদেশ দেন।
চেম্বার আদালত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৭ এপ্রিল আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, গত ৬ মার্চ এ মামলায় হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে ৬ মাসের জামিন দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলো। রোববার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত কুমিল্লার এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করে আগামী ৭ এপ্রিল আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন।
গত ৬ মার্চ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মুজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেন।
ওইদিন খালেদা জিয়ার জামিন আদেশের পর তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, আমি প্রথম থেকে বলেছি সরকার বিভিন্নভাবে বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে। কুমিল্লার এই মামলায় তার বহু আজে জামিন পাওয়া উচিৎ ছিল। সরকার বিভিন্ন উপয়ে এটাকে দীর্ঘায়িত করছে। এক বছর আগে হাইকোর্ট এই মামলায় খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেন। কিন্তু সরকার এটা নিয়ে আবার আপিল বিভাগে যেতে পারে বলে মনে আমি মনে করি। সেক্ষেত্রে আবারো বেশ কিছু সময় ক্ষেপণ হবে। তাই বেগম খালেদা জিয়া কবে মুক্তি পাবেন, সেটা আদালতের চেয়ে সরকারের সদিচ্ছার উপর নির্ভর করে। কেননা আদালত তাকে বিভিন্ন মামলায় জামিন দেয়ার পরও কাল ক্ষেপন করার জন্য সরকারের তরফ থেকে উচ্চ আদালতে মামলাটি নিয়ে যায়। শুধুমাত্র সময় ক্ষেপণের জন্য।
তিনি বলেন, আমি এখনো মনেকরি বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো আছে, সেক্ষেত্রে সাজা হলেও জামিন পাওয়ার ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবে উচ্চ আদালতে উনার জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা হবে না। কেননা যাবজ্জিবন কারাদণ্ডের ক্ষেত্রেও হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ আসামীকে জামিন প্রদান করেন। সেই ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে বর্তমানে সবচে’ জনপ্রিয় নেত্রী। তিনি একজন বয়স্ক মহিলা। তদুপরী বিনা চিকিৎসায় দীর্ঘদিন নির্জন কারাবাসে থাকার ফলে তিনি আজ গুরুতর অসুস্থ। তাই আমি মনেকরি যে মামলায় সাজা হয়েছে। সেসব মামলায় তিনি জামিন পাবেন, যদিনা সরকার ইচ্ছকৃতভাবে বাধা সৃষ্টি না করে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, গত বছরের ১২ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়া জামিন পান। সেদিনই তার জেল থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বসত এবং সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে তিনি এখন পর্যন্ত কারামুক্তি পাননি। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে তার কারাবাসকে দীর্ঘায়িত করছে। আইন যদি তার নিজস্ব গতিতে চলে তা হলে তিনি অনতি বিলম্বে মুক্তি পেয়ে জনগণের কাছে ফিরে আসবেন।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দায়ের করা হত্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন গত ৪ ফেব্রুয়ারি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরে নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। এর বিরুদ্ধে পুনরায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
গত বছরের ২৮ মে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নাশকতার দুটি ঘটনায় হত্যা ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা দুই মামলায় ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করলে আপিল বিভাগ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় করা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করেন। একইসঙ্গে এ মামলায় জামিন বিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।
এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হাইকোর্টের রুল ডিসচার্জ করে নিম্ন আদালতে জামিন আবেদনের শুনানি করেন।
বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুরে একটি নৈশকোচে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। আইকন পরিবহনের ওই বাসটি কক্সবাজার থেকে ঢাকা যাচ্ছিলো। ওই ঘটনায় আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলে সাতজন নিহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও একজন মারা যান। এ ঘটনায় ৩ ফেব্রুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানার উপ-পরির্দশক (এসআই) নূরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা করেন। এ ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের মার্চে চার্জশিট দেয় পুলিশ।