চৈত্রের মাঝামাঝিতে কালবৈশাখী ঝড়ের হানায় রাজধানীতে দুইজন নিহত হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে ঝড়ে রাজধানীর পুরোনো পল্টনের একটি বহুতল ভবন থেকে ইট পড়ে মো. হানিফ (৪৫) নামের এক চায়ের দোকানি নিহত হন। হানিফ বরিশালের মেহেদীগন্জ উপজেলার উলাদিয়া গ্রামের মৃত আবদুল লতিফের ছেলে। তিনি মুগদাপাড়া এলকায় থাকতেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সুজন জানান, ঘটনার পর পর হানিফকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল জরুরি বিভাগে নিয়ে যান তিনি। সেখানে চিকিৎসক পরিক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাদ দিয়ে এসআই সুজন আরও বলেন, পল্টন মোড়ে চায়ের দোকান ছিল হানিফের। ঝড়ের সময় পাশের একটি বহুতল ভবনের (মল্লিক কমপ্লেক্স) উপর থেকে বেশ কয়েকটি ইট তার ওপরে পড়ে।
এদিকে, ঝড়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর লেক রোডে গাছ ভেঙ্গে লিলি ডি কস্তা নামের এক নারীর (৪৫) মৃত্যু হয়েছে। শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি) জানে আলম মুন্সি বলেন, ওই নারীর লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়া ঝড় চলে প্রায় ২০ মিনিটের মতো। এরপর হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে আরও কিছুক্ষণ। ঝড়ের তোপে রাজধানীর অনেক এলাকার গাছ ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় বিলবোর্ডও খসে রাস্তায় এসে পৌঁছেছে। বেশিরভাগ রাস্তায় গাছের ছোট-ছোট ডাল-পাতা পড়ে রয়েছে।
ঝড় শুরুর কিছুক্ষণ পড়েই রাজধানীর ধানমণ্ডি, শুক্রাবাদ, পান্থপথ, কলাবাগান, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আশপাশ, আজিমপুর, লালবাগ, মগবাজার, মৌচাক, মাতুয়াইলসহ বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ চলে গিয়ে আঁধার নেমে আসে। বজ্রচেরা আলোয় এ সময় এসব এলাকা ভুতুড়ে হয়ে ওঠে। ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) পরিচালক (অপারেশন) হারুন উর রশীদ জানিয়েছেন, ঝড়ে ধানমণ্ডি, লালবাগ, মগবাজার ও মাতুয়াইল এলাকার চারটি ১৩২ কেভি গ্রিড লাইন বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে এসব এলাকাসহ আশপাশের অনেক এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে।
তিনি জানান, এসব এলাকার গ্রিড চালু করার চেষ্টা চলছে। তবে সবকিছু ঠিকঠাক করতে আরও এক থেকে দেড়ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
ফলে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে রাত দশটা বেজে যেতে পারে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের ডিউটি অফিসার আতাউর রহমান জানান, ঢাকার মগবাজারের আদ্-দ্বীন হাসপাতালের একটি দেয়াল ধসের খবর পেয়ে সেখানে একটি ইউনিট পাঠানো হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে মৌসুমী লঘুচাপের প্রভাবে এই কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছে। এই মৌসুমে এই ঝড় বৃষ্টি স্বাভাবিক।
সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যায় রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় ৭০ কিলোমিটার বেগে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। ঝড়ের স্থায়ীত্ব ছিল ২০ মিনিটের মতো। ঢাকায় ঝড় কমে গেলেও এই ঝড় ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পূর্বদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি কক্সবাজার পর্যন্ত যাবে। মধ্যাঞ্চল থেকে আধঘ্ণ্টার মধ্যে এই ঝড়ের প্রভাব কেটে যাবে। মেঘ সরে যাবে। কিন্তু, ঝড়টি দক্ষিণ দিকে যত অগ্রসর হবে, ততই সেসব এলাকায় ঝড়ের প্রভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হবে। রাত ১২টার মধ্যে ঢাকার আশপাশের এলাকাসহ পুরো মধ্যাঞ্চল ঝড়ের আওতামুক্ত হবে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশপাশের এলাকায় বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ- হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।