সহজ ম্যাচ হয়ে গেল রুদ্ধশ্বাসে লড়াই

 আইপিএলে সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতল দিল্লি ক্যাপিটালস। ১৮৬ রান তাড়া করতে নেমে দিল্লি ১৭ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রানে পৌঁছে গিয়েছিল। পৃথ্বী সাউ ৯৬ ও ঋষভ পন্থ ১০ রানে ক্রিজে ছিলেন। কিন্তু তারপর নাটকীয়ভাবে ম্যাচের মোড় ঘোরে। একে একে ফিরে যান ঋষভ (১১), পৃথ্বী (৯৯)। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দিল্লির দরকার ছিল ৬ রান। কিন্তু কেকেআরের চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদব অসম্ভবকে যেন সম্ভব করে তুলছিলেন। পঞ্চম বলে তিনি ফেরান হনুমা বিহারিকে (২)। অন্তিম বলে জয়ের জন্য দু’রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান ইনগ্রাম। স্কোর টাই হয়ে যায়।

ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। কেকেআর ক্যাপ্টেন দীনেশ কার্তিক সাহস করে বল তুলে দেন তরুণ পেসার প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার হাতে। মাত্র ১০ রান দেন প্রসিদ্ধ। আউট করেন শ্রেয়াসকে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে রাবাদার প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান রাসেল। মনে হচ্ছিল কেকেআর সহজেই জিতে যাবে। কিন্তু রাবাদা পরের বলে কোনো রান দেননি। তৃতীয় বলে রাসেলকে বোল্ড করে তিনি ম্যাচ জমিয়ে দেন। শেষ তিনটি বলে রাবাদা মাত্র তিন রান দেন। ১ উইকেট হারিয়ে কেকেআর তোলে ৭ রান। সেই সঙ্গে কোটলায় নাইটদের বিরুদ্ধে নাটকীয় জয় ছিনিয়ে নেয় দিল্লি ক্যাপিটালস। পৃথ্বী সাউয়ের অসাধারণ ব্যাটিং কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্টের যাবতীয় পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দেয়। পৃথ্বী বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি শুধু টেস্টে নয়, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার ক্ষমতা রাখেন। মুম্বইয়ের ছেলে পৃথ্বীই দিল্লির জয়ের নায়ক। তবে তিনি সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন। ৫৫ বলে ৯৯ রানে আউট হন তিনি। তার ইনিংসে রয়েছে ১২টি চার ও ৩টি ছক্কা। ক্যাপ্টেন শ্রেয়াস আয়ারের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে পৃথ্বী যোগ করেন ৮৯ রান। শ্রেয়াস আউট হন ৪৩ রানে। ঋষভ পন্থের সংগ্রহ ১১ রান। একটা দিল্লির দরকার ছিল ১৮ বলে ১৮ রান।

যদিও ইডেনের পর ফিরোজ শাহ কোটলাতেও আছড়ে পড়েছিল রাসেল-ঝড়। গত দু’টি ম্যাচে কেকেআরকে জিতিয়ে ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেলেও রাসেল হাফ-সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। শনিবার সেই আক্ষেপ মেটান ২৩ বলে অর্ধশতরান করে। রাসেল যখন ব্যাট করতে নামেন, তখন কেকেআরের অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না। ৬১ রানে পড়ে গিয়েছিল ৫ উইকেট। কোটলার পিচে শুরুতে ব্যাট করতেও সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু রাসেল যখন ফর্মে থাকেন, তখন কোনো প্রতিরোধই তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। কিন্তু চতুর্দশ ওভারে হার্শল প্যাটেলের বিমারে ভূপতিত হন রাসেল। তার বাঁ-কাঁধে চোট লাগে। তা সত্ত্বেও তিনি উঠে দাঁড়ান এবং ব্যাটে ঝড় তোলেন। ষষ্ঠ উইকেটে ক্যাপ্টেন দীনেশ কার্তিকের সঙ্গে ৯৫ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন রাসেল।

তার ব্যাটিং তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েন দিল্লির বোলাররা। মাত্র ২৮ বলে চারটি বাউন্ডারি ও ছ’টি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৬২ রান করে আউট হন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারটি। কমলা টুপিও ছিনিয়ে নিতে সফল হয়েছেন রাসেল। চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে ক্যাপ্টেন দীনেশ কার্তিক বড় ইনিংস গড়ে তোলার মঞ্চটা সাজিয়ে দিয়েছিলেন রাসেলের সামনে। ৩৬ বলে পাঁচটি চার ও দু’টি ছক্কার সাহায্যে ৫০ রান করে আউট হন কার্তিক। ক্রিস লিনের সঙ্গে ওপেন করতে নিখিল নায়েক ১৬ বল খেলে মাত্র ৭ রান করেন। রবীন উথাপ্পা দারুণ ফর্মে থাকা সত্ত্বেও এদিন ১১ রানের বেশি করতে পারেননি। ২০ রানে ক্রিস লিনের অনবদ্য ক্যাচ ধরেন দিল্লি ক্যাপিটালসের উইকেটরক্ষক ঋষভ পন্থ। বাউন্ডারি লাইনের ধারে রাবাদার দুরন্ত প্রয়াসে নীতীশ রানার (১) ক্যাচ ধরেন। অহেতুক ঝুঁকি নিয়ে শুভমান গিল (৪) রান আউট হয়ে দলকে আরও চাপে ফেলে দেন। তবে শেষ দিকে পীযূষ চাওলা (১২) ও কুলদীপ যাদব (১০) ভালো ব্যাট করেছেন।

তবে শাহরুখের কেকেআর’কে হারিয়ে শেষ হাসি হাসেন সৌরভের দিল্লি ক্যাপিটালস।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top