কারাগারে যেভাবে আছে ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলাকারী

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলা চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যা করার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবার আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন যে কারাগারে তিনি চিকিৎসা পাচ্ছেন না।

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ২৮ বছর বয়সী ব্রেন্টন টারান্টকে একটি হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, এরপর তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ তোলা হবে।

ব্রেন্টনকে পারেমোরেমোর অকল্যান্ড জেলখানা, যাকে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে কঠোর জেলখানাগুলোর একটি ভাবা হয়, সেখানে সবার থেকে আলাদা রাখা হয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের সংবাদবিষয়ক ওয়েবসাইট স্টাফ এক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ব্রেন্টন জানিয়েছে যে তাকে কোনো দর্শনার্থীর সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না, কোনো ফোনও করতে দেয়া হচ্ছে না।

১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চে সেই হামলার ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ঘটনার পরের শুক্রবারে হ্যাগলি পার্কে এক স্মরণসভায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন এবং অন্তত কুড়ি হাজার মানুষ নিহতদের স্মরণে সমবেত হয়েছিলেন।

ব্রেন্টনের অভিযোগ আসলে কী?
হামলার পরদিন ১ মার্চ ব্রেন্টনকে ক্রাইস্টচার্চে আদালতে হাজির করা হয়। এরপরই তাকে অকল্যান্ডের ঐ জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

স্টাফ ওয়েবসাইট জানিয়েছে, ব্রেন্টন ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশনে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে, জেলখানায় সে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, বিশেষ করে ফোন এবং কোনো পরিজনের সঙ্গে দেখা করতে পারছে না সে।

নিউজিল্যান্ডের আইন অনুযায়ী একজন বন্দি সপ্তাহে একজন বেসরকারি দর্শনার্থীর সঙ্গে অন্তত ৩০ মিনিট কথা বলতে পারবেন এবং সপ্তাহে একবার ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।

এছাড়া একজন বন্দি যথার্থ খাবার ও পানীয়, বিছানাপত্র, স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যয়ামের সুবিধাদি পাবেন।

ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশনের একজন কর্মকর্তা স্টাফকে জানিয়েছেন, সবার থেকে আলাদা করে তাকে রাখা হয়েছে এবং তাকে সারাক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

ফলে সে অনেক ন্যুনতম সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে সে অভিযোগ করেছে।

অভিযোগ কতটা যথার্থ?
নিউজিল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বন্দিদের মানবতা, মর্যাদা এবং সম্মানের সঙ্গে থাকার অধিকার রয়েছে।

তবে, কর্তৃপক্ষ বিশেষ পরিস্থিতিতে কোনো বন্দির জন্য এ নিয়মের অন্যথা করতে পারে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোনো বন্দিকে যদি নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে আলাদা করে রাখা হয়, তাহলে তার ক্ষেত্রে অন্য যেকোনো নিয়ম শিথিল হতে পারে।

জেলে কী অবস্থায় আছে ব্রেন্টন?
ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশনের একজন মুখপাত্র নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যে ব্রেন্টন কোনো গণমাধ্যম বা দর্শনার্থীর সঙ্গে দেখা করতে পারে না। দেশটির প্রচলিত আইন অনুযায়ী নিরাপত্তার কারণে তার সম্পর্কে কোনো তথ্য বাইরে প্রকাশ করা যাবে না।

এদিকে, স্টাফ ওয়েবসাইট জানিয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে ব্রেন্টনের থাকার জায়গা থেকে এক কংক্রিট আঙিনায় যাওয়া যায়, যেখানে সে দিনে একবার এক ঘণ্টার জন্য যেতে পারে।

তবে সে সবকিছু নিয়ে অভিযোগ করতে থাকে।

এপ্রিলের পাঁচ তারিখ পর্যন্ত ব্রেন্টনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

ক্রাইস্টচার্চে পরবর্তী শুনানির দিনে তাকে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে আদালতের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।

নিউজিল্যান্ডের ক্ষত সারছে যেভাবে
ঐ হামলার ধাক্কা সামলাতে নিউজিল্যান্ড যে অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাকে সম্মান জানিয়েছে সারা বিশ্ব। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডান বলেছেন, আমরা হেইট বা ঘৃণা এবং ভীতির ঊর্ধ্বে নই। কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা দ্রুত সেরে উঠবো।

ঐ ঘটনায় ৫০ জন মারা গেছেন।

এখনো ২২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, এর মধ্যে চার বছর বয়সী একটি শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সূত্র : বিবিসি

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top