মাত্র বছর দু’য়েক আগে পুড়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারো আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের স্বপ্ন। গতবারের আগুনে পোড়ার গন্ধ যেতে না যেতেই আবারো সর্বনাশ। এখন শুধুই হাহাকার।
দু’বছরের ব্যবধানে সর্বস্ব খুইয়ে এখন সর্বহারা গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান। হাবিবের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উপহার ক্রোকারিজের তিনটি দোকানই পুড়ে ছাই। দোকানে প্রায় ৮০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। দেশের নামি-দামি তারকাচিহ্নিত হোটেলে পণ্য সরবরাহ করতেন হাবিব। বিদেশি পণ্যই বেশি ছিল তার দোকানে। ২০১৭ সালের আগুনে হাবিবের চারটি দোকানের সাড়ে তিন কোটি টাকার পণ্য পুড়ে গিয়েছিলো। ব্যাংক ঋণ নিয়ে ফের দাঁড় করান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আবার উঠে দাঁড়াবেন সেই অবস্থা আর নেই।
নিজের পোড়া দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে নির্বাক হয়ে দেখছিলেন পুড়ে যাওয়া পণ্যের ভস্ম। হাবিব বলেন, ‘এবার একেবারে পথে বসে গেলাম। দু’বছরের ব্যবধানে সবই হারালাম। গতবারের আগুনে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার পণ্য পুড়েছিল। এবার ৮০ লাখ টাকার পণ্য পুড়ে গেল। কী নিয়ে কোথায় দাঁড়াব।’ হাবিব বলেন, ‘গতবার পুড়ে যাওয়ার পর ৫০ হাজার টাকা করে দিয়ে মার্কেট দাঁড় করিয়ে ছিলাম। ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা থাকলেও সরকার কোনো সহায়তা করেনি। হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেল নিমিষেই। শত শত ব্যবসায়ী আমার মতো আজ নি:স্ব।’
মার্কেটের সামনে দাড়িয়ে আহাজারি করছিলেন ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম। ২০১৭ সালের আগুনে তার ৫টা দোকান পুড়ে কয়লা হয়। আর এবার ৭টা দোকান পুড়ে ছাঁই হলো। জহিরুল বলেন, আমার জীবনের সমস্ত সম্বল শেষ হয়ে গেল। গতবার দোকান পোড়ার পর মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করি। এবার ৩ ভাইয়ের ৭টা দোকান পুড়ে গেলো। কাঁচাবাজার, সুপার মার্কেট ও গুলশান শপিং সেন্টারে আমাদের ৭টি দোকান।
জহিরুল বলেন, ফায়ার সার্ভিস যখন আসলো তখন আগুন মাত্র সুপার মার্কেটে লেগেছে। তারা চেষ্টা করলেও পানি ছিলো না। এরপর গুলশান শপিং সেন্টারে আগুন লাগলো। ৩ তলা পুড়ে গেল। আমার তো সব শেষ। ক্ষতির পরিমাণ কেমন জানতে চাইলে বলেন, কোটি টাকার বেশি। ক্রোকারিজের দোকান। মালের শেষ নেই। ফায়ার সার্ভিস আর একটু আগে আসলে আমি নিঃস্ব হতাম না।
দোকান মালিক লিটন জানান, প্রায় কোটি টাকার মালামাল ছিল তার। এই মার্কেটে তার ছিল ৮ টি দোকান। সব ছিল মুদি দোকান। ছিল বেবি ফুড, তেল, চাল, ডাল, মশলা ইত্যাদি। তিনি বলেন, তার প্রায় কোটি টাকার মালামাল ক্ষতি হয়েছে। বলেন, নিঃস্ব, ফকির হয়ে গেলাম। আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব না। ব্যাংকে লোন আছে আমার।
প্লাস্টিক সামগ্রী ও কাপড়ের দোকান ছিল আমেনা বেগমের। তিনি গতকাল আড়াই লাখ টাকার পণ্য এনেছেন। সব পুড়ে ছাই। গতকাল ভোররাতেই ৬০ হাজার টাকার মাছ এনেছেন সজীব মিয়া। ৪০ হাজার টাকাই ধার। মাছের সঙ্গে জ্বলে গেছে সজিব মিয়ার স্বপ্নও। শুধু সজীব মিয়া, আমেনা বেগম, লিটন নন এরকম অন্তত দু’শো ব্যবসায়ী এখন দিশেহারা।