টানা দ্বিতীয় শুক্রবারের মতো নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি পার্কে মসজিদে হামলায় নিতদের স্মরণ ও মুসলিমদের প্রতি সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার(২৯ মার্চ) অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে যোগ দিয়েছে ২৫ হাজারের বেশি নিউজিল্যান্ডবাসী। এদিন সমাবেশ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডের্ন। সমাবেশে মুসলিমদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশী ফরিদ আহমেদ- যার স্ত্রী ওই হামলা নিহত হয়েছে।
আনাদোলু বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশে নিহত মুসুল্লিদের নাম পাঠ করে তাদের জন্য দোয়া করা হয়। এ সময় উপস্থিত ২৫ হাজারের বেশি লোক দাড়িয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও নিউজিল্যান্ডের গভর্নর জেনারেল পাস্টি রেড্ডি, ব্রিটিশ নওমুসলিম সঙ্গীত তারকা ইউসুফ ইসলাম, সঙ্গীত তারকা মারলন উইলিয়ামস, হোলি স্মিথ ও টিকস।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, উগ্রবাদের বৃদ্ধিতে বিশ্ব উদ্বিগ্ন, এই ধারা অবশ্যই থামাতে হবে। আমাদের একার পক্ষে এটি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এটি কোন দেশ জাতি বা বর্ণের সমস্যা নয়, এটি মানব জাতির সমস্যা। মানবতার শত্রু।
কালো পোশাক পরে মঞ্চে হাজির হন জাসিন্ডা। তিনি উগ্রবাদ প্রতিহত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, কোন ভাষা দিয়েই সেই নিহত ৫০ জন ও যারা আহত হয়েছে তাদের কষ্ট প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কোন ভাষা দিয়েই আমাদের মুসলমান সম্প্রদায়ের এই কষ্ট প্রকাশ করা সম্ভব নয়- যার ঘৃনা ও সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। আসলামু আলাকুম বলে বক্তৃতা শেষ করে জাসিন্ডা আরডের্ন।
সমবেশে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশী অভিবাসী ফরিদ আহমেদ। যিনি ভাগ্যক্রমে ওই দিনের হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার স্ত্রী হুসনা নিহত হয়েছেন সেদিন আল নুর মসজিদে। হুইল চেয়ার মঞ্চে এসে ফরিদ আহমেদ তার বক্তৃতায় বলেন, আমি সেই ঘাতককে ক্ষমা করে দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা সবাই মানুষ। এক আদমের সন্তান। সে হয়তো কোন কারণে ভুল পথে চলে গেছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে তাকে আমি ঘৃণা করতে পারি না। তাই তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘নামাজের সময় যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের মৃত বলবেন না, তারা জীবিত। মসজিদে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার ব্যক্তিদের স্থান জান্নাতে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, এদিন সমাবেশ স্থলে ও মসজিদগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। সমাবেশে উপস্থিতি নিউজিল্যান্ডের পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ জানান নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন ৫০ জন মুসুল্লি। অস্ট্রেলীয় এক অস্ত্রধারী পরপর দুটি মসজিদে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে হামলা চালায়। আল নুর ও লিনউড নামক দুটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় চালানো ওই হামলায় নারী, শিশুসহ নিহত হয়েছে ৫০ জন মুসুল্লি।